“দু-হাতে সোনা ছড়ানো নদী মালার দিকে তাকিয়ে তার নিঃশ্বাস শুনি।”
দু-হাতে সোনা ছড়ানো নদী মালার দিকে তাকিয়ে তার নিঃশ্বাস শুনি। |
খ) ‘নদীমালা’র সঙ্গে ‘দু-হাতে সোনা ছড়ানো’র সম্পর্ক কী?
গ) তার সম্পর্কে লেখক যা বলতে চেয়েছেন বুঝিয়ে বলো।
ক) এখানে কার নিঃশ্বাসের কথা বলা হয়েছে?
উদ্ধৃত অংশটি লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই রচনায় তিনি এক ১২-১৩ বছরের উলঙ্গ কিশোরের বর্ণনা দিয়েছেন, যে চার হাত পায়ে হেঁটে বাজারের রাস্তা থেকে চাল আর ছোলা খুঁটে খেয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
এখানে এই ছেলেটির বেঁচে থাকার জন্য সীমাহীন কষ্টে ডুবে থাকা নিঃশ্বাসের কথা বলা হয়েছে।
খ) নদীমালার সঙ্গে দু-হাতে সোনা ছড়ানোর সম্পর্ক কী?
প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশ নদীমাতৃক একটি জনপদ। নদীবিধৌত পলিমাটি এবং মৌসুমী জলবায়ুর কারণে বাংলার ভূমি হয়ে উঠেছে, কবির কথায়, সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা। প্রকৃতির অকৃত্রিম আশীর্বাদে প্রতিবছর বাংলার মাঠ তাই সোনালি ফসলে ভরে ওঠে। পলিমাটির সাথে সাথে নদীর জলও এই সোনালি ফসলের অন্যতম প্রাণ ভোমরা। তাই মালার মত ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদীকে, সারা বাংলা জুড়ে সোনার ফসলে মূড়ে দেওয়ার অন্যতম কারিগর বলে মনে করেন লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সুতরাং সারা বাংলা জুড়ে ‘নদীমালা’র সঙ্গে ‘দু-হাতে সোনা ছড়ানো’র (ফসল ফালানোর) রয়েছে গভীর সম্পর্ক। এ সম্পর্ক যেন উভয়ের মধ্যে নাড়ির সম্পর্ক। কারণ এই ‘নদীমালা’কে বাদ দিয়ে ‘সোনার ফসল’ ফলানো, লেখকের ভাবনায়, অবাস্তব স্বপ্ন।
গ) তার সম্পর্কে লেখক যা বলতে চেয়েছেন বুঝিয়ে বলো।
তবু, লেখক হতাশ হয়ে পড়েন এই ভেবে যে, প্রকৃতির অনাবিল আশীর্বাদে পাওয়া ও সোনার ফসলে মাঠ ভরে যাওয়া সত্ত্বেও বাংলার অসংখ্য প্রান্তিক মানুষের মত এই কিশোরও দীর্ঘ অনাহারে এক ‘অদ্ভুত জন্তু’তে পরিণত হয়েছে। তার এভাবে অসম লড়াইয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টায় বেরিয়ে আসে এক অসম ও হতাশায় ভরা ভয়ানক ভারী নিঃশ্বাস। এই নিঃশ্বাসে ভর করে সে তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে যেন সেই সব খুনিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যারা গ্রামের শহরে নগরের বন্দরে তার মতো অসংখ্য জীবনের গলায় মৃত্যুর ফাঁস পরাচ্ছে।
তাদের এই ভয়ানক নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে ওঠে লেখকের দরদী হৃদয়ও। সেই ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই তিনি বুঝতে পারেন, ওই কঙ্কালসার কিশোরের জ্বলন্ত চোখ দুটো শাস্তি চাই ওই সব খুনিদের। প্রতিষ্ঠা করতে চায় অনাবিল শান্তি অনাহারে মৃত্যুহীন এক স্বাধীন সুখী জীবন।
লেখক বলতে চাইছেন যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের ঘনায়মান অন্ধকারে ওই কিশোরের দুটি জ্বলন্ত চোখ জেগে আছে আসমুদ্রহিমাচল এই বাংলার পাহারাদার হয়ে। সে চেষ্টা করছে মাটি থেকে হাত দুটো হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দু-পায়ে উঠে দাঁড়ানোর। লেখকের দাবি, অন্য মানুষেরাও তার দিকে হাত বাড়াক। বাংলার সমাজ হয়ে উঠুক শ্রেণীহীন শোষণহীন ও বৈষম্যহীন এক মুক্ত মানব সমাজ।
---------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন