কত সব খবর! / কত সব প্রশ্ন! |
কত সব খবর! কত সব প্রশ্ন! |
খ) এই সব খবরকে কেন্দ্র করে কবি যে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
গ) এইসব প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে কবি কোন্ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়?
ক) কীসের খবর?
উদ্ধৃত অংশটি কবি বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবি এখানে মানব সভ্যতার বিবর্তনে শ্রমজীবী মানুষের যে অবর্ণনীয় অবদান রয়েছে তা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। এই চেষ্টার প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে পৃথিবীর নানান গৌরব গাথার কথা। মিশর, ব্যাবিলন, চিন সহ ইউরোপের নানান দেশের এইসব ভুবন বিখ্যাত ঘটনার উত্থান, পতন ও তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ইতিহাসের পাতায় যে সব আপাত সত্যকে সত্য-সংবাদ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলোকেই এখানে ‘খবর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
খ) এই সব খবরকে কেন্দ্র করে কবি যে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
এইসব ‘খবর’কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে প্রথাগত ইতিহাস। ফলে সেখানে প্রকৃত সত্য উপেক্ষিত থেকে গেছে যুগ যুগ ধরে। এই কবিতায় কবি সেই প্রকৃত সত্যের উদঘাটন করার চেষ্টা করেছেন। এই চেস্টার প্রেক্ষাপটে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন আপাত সত্যের বিরুদ্ধে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন,
১) সাত দরজাওয়ালা মিশরের টিপস নগর তৈরীর ইতিহাসে রাজার নাম লেখা আছে। কিন্তু যাদের অক্লান্ত কঠোর পরিশ্রমে এর নির্মাণ সম্ভব হয়েছিল, তাদের নাম লেখা নেই কেন?
২) সমৃদ্ধ লিমাকে যারা তৈরি করেছিল, কিংবা চীনের প্রাচীর যাদের শ্রম ব্যতিরেখে গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না, তাদের সন্ধান কেউ রাখেনি কেন?
৩) রোমকে গড়ে তুলেতে কিংবা জুলিয়াস সিজার বা আলেকজান্ডারের দিগ্বিজয়কে সম্ভব করে তুলতে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিল, তাদের কথা ইতিহাসে লেখা নেই কেন?
৪) প্রশ্ন তুলেছেন স্পেনের গর্ব স্প্যানিশ আর্মাডা ব্রিটিশ আক্রমণে ডুবে গেলে যারা কেঁদেছিলেন তাদের মধ্যে শুধু রাজা ফিলিপের নামে কেন লেখা আছে? সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কি সেদিন কষ্ট পায়নি?
৫) রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফেডারিক দীর্ঘ সাত বছর ধরে যে যুদ্ধ করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেছিলেন তা কি শ্রমজীবী সৈনিকদের জীবন পন করা ছাড়া সম্ভব হতো?
ইতিহাসের এইসব অনালোকিত অধ্যায় কবিতার এই কবিতায় তুলে ধরেছেন প্রশ্নের আকারে।
গ) এইসব প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে কবি কোন্ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়?
এসব প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন ইতিহাসের প্রতিটি ঘটনায় বিজয় উৎসবের ভোজের আয়োজনে কিংবা মহামানবের প্রতিষ্ঠায় কিংবা অভিষেক যাত্রায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের অবদানই প্রধান। অথচ প্রথাগত ইতিহাসের পাতায় তাদের কোন স্বীকৃতি নেই।
সমগ্র কবিতা জুড়ে এইসব প্রশ্নের অবতারণার মাধ্যমে তিনি একজন সত্যসন্ধানী, শ্রমিকদরদী ও হৃদয়বান মানবিক প্রেমিক কবি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন।
----------xx--------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন