“পাতলা কুয়াশায় মোড়া পঞ্চাশের আকালের এক সকাল”
পাতলা কুয়াশায় মোড়া পঞ্চাশের আকালের এক সকাল |
খ) এই সকালে দেখা দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
গ) এই দৃশ্য দেখার পর লেখক এর মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল?
ক) পঞ্চাশের আকাল কী?
উদ্ধৃত অংশটি প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে নেয়া হয়েছে। এই রচনায় পঞ্চাশের আকাল বলতে ১৩৫০ বঙ্গাব্দে ঘটে যাওয়া বাংলার দুর্ভিক্ষ কে বুঝিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য সংগ্রহ এবং কিছু দেশীয় মজুমদারদের অনৈতিক মজুমদারের কারণে এই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
খ) এই সকালে দেখা দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
১৩৫০ বঙ্গাব্দের দুর্ভিক্ষ পীড়িত কুয়াশায় মোড়া এক শীতের সকাল। লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রাজবাড়ীর বাজারে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছেন। গন্তব্য ফরিদপুর। বাংলা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে তার সময় পার হচ্ছিল। তিনি দেখছিলেন হিমালয় থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। একটু দূরে হিমালয় পাহাড় আকাশের পিঠে পিঠ রেখে হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে, যেন প্রকাণ্ড এক দৈত্য।
এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে থাকতে থাকতেই তার নজরে পড়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য। দেখতে পান এক অদ্ভুত জন্তু চার পায়ে এগিয়ে আসছে। লেখক এর বর্ণনায়,
কুয়াশার মধ্যেও জ্বলজ্বল করছে তার দুটো চোখ। একা থাকলে ভয়ে মূর্ছা যেতাম। কেননা সেই চোখের দৃষ্টিতে এমন এক মায়া ছিল, যা বুকের রক্ত হিম করে দেয়।
আরো একটু এগিয়ে এলে তিনি দেখতে পান রাস্তার ধুলো থেকে সে কি যেন খুঁটে খাচ্ছে। ঠিক মানুষের হাতের মতো তার সামনের দুটো থাবা। আঙুলগুলো বড্ড বেশি সরু। গায়ে তার এক ফোটা লোম নেই। একেবারে সামনে আসতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান এবং লক্ষ্য করেন জন্তুর মতো এই জীবটি আসলে একজন মানুষ। বয়স ১২-১৩ বছর। সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় বাজারের রাস্তায় খুঁটে খুঁটে চাল আর ঝোলা খাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার পর লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় যন্ত্রণা কাতর হয়ে ছুটে পালিয়ে আসেন স্টেশনের মধ্যে।
গ) এই দৃশ্য দেখার পর লেখক এর মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল?
লেখক পালিয়ে এসেছিলেন বটে, কিন্তু এই দৃশ্য, বিশেষ করে সেই কিশোরের জলন্ত চোখ দুটো তাকে এখনো থেকে থেকে পাগল করে তোলে। দুহাতের সোনা ছড়ানো নদীমালার দিকে তাকিয়ে আজও শুনতে পান তার নিঃশ্বাস। আজও দেখতে পান, সে যেন তার শুরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেই সব খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে, যারা সারা বাংলা জুড়ে মানুষের গলায় মৃত্যুর ফাঁস পরাচ্ছে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিচ্ছে না।
লেখকের মনে হয়েছে ছেলেটির জ্বলন্ত চোখ দুটি শান্তি চাই। চায় বাংলার বুক জুড়ে সোনালী ফসল ফলুক, চাষির গোলা ভরে উঠুক সোনালী ধানে। মানুষের জীবন বন্ধন মুক্ত হোক। বন্ধ হোক অনাহারে মৃত্যু। যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের অন্ধকার সময়ে আসমুদ্রহিমাচল বাংলাকে পাহারা দিচ্ছে এবং মাটি থেকে হাত দুটো ছাড়িয়ে দু পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক যেন মানুষের মত।
লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় এভাবেই পঞ্চাশের আকালের এক সকালের সকলুন দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন তার এই লেখার মধ্য দিয়ে।
---------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন