“সামনাসামনি আসতেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম”
সামনাসামনি আসতেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম |
খ) স্তম্ভিত হওয়ার কারণ কী ছিল?
গ) পরবর্তীতে লেখকের কী উপলব্ধি হয়েছিল?
ক) কোন্ দৃশ্য দেখে লেখক স্তম্ভিত হয়ে গেলেন?
সমাজ সচেতন প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেওয়া ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই প্রবন্ধে কথিত রাজবাড়ীর বাজার থেকে ফরিদপুরে ফেরার জন্য লেখক স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মেলেটারি ছাউনির পাশে একটা অদ্ভুত জন্তু দেখতে পেলেন। এক অদ্ভুত জন্তু কেন চার পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে আসছে। লেখক এর বর্ণনায়,
কুয়াশার মধ্যেও জ্বলজ্বল করছে তার দুটো চোখ। একা থাকলে ভয়ে মূর্ছা যেতাম। কেননা সেই চোখের দৃষ্টিতে এমন এক মায়া ছিল, যা বুকের রক্ত হিম করে দেয়।
আরো একটু এগিয়ে এলে তিনি দেখতে পান রাস্তার ধুলো থেকে জন্তুটি কী যেন খুঁটে খাচ্ছে। ঠিক মানুষের হাতের মতো তার সামনের থাবা দুটো। আঙুলগুলো বড্ড বেশি সরু। গায়ে তার এক ফোটা লোম নেই। একটু পরে সামনাসামনি আসতেই তিনি দেখলেন —এটা কোন জন্তু নয়, একজন মানুষ।
এই দৃশ্য দেখে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্তম্ভিত হয়ে গেলেন।
খ) স্তম্ভিত হওয়ার কারণ কী ছিল?
এই দৃশ্য দেখে লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, এ বীভৎস, করুণ ও অমানবিক দৃশ্য তিনি আগে কখনও দেখেননি। তিনি দেখেননি, একটি ১২-১৩ বছরের কিশোর, যার উঠে দাঁড়িয়ে পথ হাঁটার ক্ষমতা নেই। জন্তুর মত চার হাত পায়ে এগিয়ে আসছে। রাস্তায় পড়ে থাকা চাল আর ছোলা খুঁটে খুঁটে খেয়ে বেঁচে থাকার অসম্ভব লড়াই করছে। অথচ এই বাংলা সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা হিসেবেই পরিচিত। খাদ্যের অভাবে এখানে থাকার কথা নয়। কঙ্কাল সার দেহ নিয়ে মানুষকে বাঁচতে হবে —এমন ভূমি তো এ বাংলা নয়। তবু মানুষের এভাবে জন্তুর মত শৃঙ্খলিত ও অসহায় ভাবে অনাহারে বাঁচতে হচ্ছে, একথা ভেবে তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেছেন।
গ) পরবর্তীতে লেখকের কী উপলব্ধি হয়েছিল?
বস্তুত, এই দৃশ্য দেশের অর্থসামাজিক ব্যবস্থার বিষয়ে লেখককে এক নিদারুণ উপলব্ধির মুখোমুখি দাঁড় করায়। তিনি উপলব্ধি করেন, বিদেশি শাসকের জুলুম ও শোষণ, পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফা লাভের সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা এবং উচ্চবিত্তের উদাসীনতা ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থপরতা অসমুদ্র হিমাচল এই সোনার বাংলার এহেন করুন পরিণতি ডেকে এনেছে।
এই উপলব্ধির সাথে সাথে তিনি ভেবেছেন এই ভয়ংকর আর্থিক বৈষম্য থেকে মানুষের মুক্তি কীভাবে হবে। কামনা করেছেন, মানুষের মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়েই একমাত্র এর অবসান সম্ভব। তাই কঙ্কালসার দেহ নিয়ে বেঁচে থাকা কিশোরের জলন্ত চোখের দৃষ্টিতে তিনি দেখতে পান একজন বন্ধন মুক্ত মানুষের স্বপ্ন। এই চোখ পাহারাদারের মতো শনাক্ত করার চেষ্টা করছে সেই সব খুনিদের যারা শহর গ্রাম জুড়ে মানুষের গলায় ফাঁস পরাচ্ছে। মাটি থেকে দুহাত ছাড়িয়ে দু পায়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টায় দিবারাত্রি এক করে পথে নামছে। তাই সব শেষে লেখক এর আকুতি পাঠকের কাছে, “তোমরাও হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো।”
---------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন