“সেই দুটি জ্বলন্ত চোখ শাস্তি চায়”
ক) এখানে ‘কোন্ চোখে’র কথা বলা হয়েছে?অথবা,
কার কথা বলা হয়েছে?
খ) সে কীরূপ শাস্তি চায়?
অথবা,
খ) সে কীরূপ শাস্তি চায়?
অথবা,
সে কীভাবে শাস্তি চায়, বুঝিয়ে লেখো।
গ) ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক কী উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছিলেন?
ঘ) লেখক তাকে কীভাবে এবং কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
গ) ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক কী উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছিলেন?
ঘ) লেখক তাকে কীভাবে এবং কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
ক) এখানে কোন্ ‘চোখে’র কথা বলা হয়েছে?
অথবা,
কার কথা বলা হয়েছে?
সমাজ সচেতন প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘আমার বাংলা’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘হাত বাড়াও’ নিবন্ধে পঞ্চাশের মন্বন্তরের এক মর্মস্পর্শী ছবি তুলে ধরেছেন।
এই রচনায় ১২-১৩ বছর বয়সি এক কঙ্কালসার দেহ-বিশিষ্ট ‘অদ্ভুত জন্তু’র মতো দেখতে এক নিরন্ন কিশোরের বর্ণনা রয়েছে। যার জ্বলন্ত চোখের দৃষ্টি ‘বুকের রক্ত হিম করে দেয়’। আলোচ্য উদ্ধৃতিতে এই কিশোর এবং তার জ্বলন্ত চোখের কথা বলা হয়েছে।
খ) সে কীরূপ শাস্তি চায়?
অথবা,
সে কীভাবে শাস্তি চায় বুঝিয়ে লেখো।
এই জ্বলন্ত চোখ দুটি শাস্তি চায়। শাস্তি চায় সেইসব খুনি মানুষদের, যারা শহরে, গ্রামে গঞ্জে, নগর বন্দরে ‘জীবনের গলায় মৃত্যুর ফাঁস পরাচ্ছে’। মানুষকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে দিচ্ছে না। তার সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সে যেন সেইসব খুনিদের শনাক্ত করছে, বিচারের কাঠগড়ায় তোলার জন্য। তার জ্বলন্ত চোখ এবং ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া নিঃশ্বাসের শব্দে লেখক যেন সেই শাস্তির কামনাই ঝরে পড়তে দেখছেন কিংবা শুনতে পেয়েছেন।
সেই সঙ্গে সে চেয়েছে, এই শাস্তি আসুক শান্তির বার্তা বহন করে। কামনা করেছে, বাংলার বুক জুড়ে সবুজ মাঠের সোনালী ফসলে আর চাষীর গোলা ভরা ধানে ভর করে আসুক সেই শান্তি। শান্তি আসুক কারখানায় কারখানায় বন্ধন মুক্ত মানুষের আন্দোলিত বাহুতে বাহু মিলনের মধ্য দিয়ে। মিলিত হোক যুদ্ধ আর অনাহারকে দূরে ঠেলে কোটি কোটি মানুষের বলিষ্ঠ হাত, স্বাধীন ও সুখী জীবনের খোঁজে। এভাবেই নেমে আসুক শাস্তি ও শান্তির যুগল বার্তা, যা সবার জীবনে বয়ে আনবে এক অকৃত্রিম ও অনাবিল শান্তি।
লেখক এই কিশোরের জ্বলন্ত চোখের চাহনিতে শাস্তির আকাঙ্ক্ষা প্রত্যক্ষ করেলেও সেই চাউনিতেই দেখতে পেয়েছেন অকৃত্রিম শান্তি প্রতিষ্ঠার দুর্নিবার চেষ্টাকে। তিনি দেখেছেন, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের ঘন অন্ধকার ঠেলে তার জ্বলন্ত চোখ দুটো জেগে আছে আসমুদ্র-হিমাচল এই বাংলাকে পাহারা দিতে। শান্তির লক্ষ্যেই সে যেন তার হাত দুটোকে মাটি থেকে ছাড়িয়ে দু’পায়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। লেখকের বিশ্বাস, এভাবেই সমস্ত মানুষের সমবেত হাত তার হাতের সঙ্গে মিলিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে সেই কঙ্ক্ষিত শান্তি। মূলত এভাবেই সে এক স্বাধীন ও সুখী জীবনশক্তিতে ভরপুর শান্তির মোড়কে শাস্তি চেয়েছেন।
গ) ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক কোন উপলব্ধিতে উপনীত হয়েছিলেন?
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ সচেতন লেখক উপলব্ধি করেছেন এই ছেলেটির উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টাকে সমাজের সকল স্তরের মানুষ যদি উৎসাহিত করে এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে নিশ্চয়ই একদিন এই বাংলা পুনরায় সোনার বাংলায় পরিণত হবে। সমস্ত সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাবে বাংলার ভূমি।
ঘ) লেখক তাকে কীভাবে এবং কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
অসংখ্য নদী নালায় ভরা এই বাংলা সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা হিসেবেই পরিচিত সেই আদিকাল থেকেই। তাই ভাতের অভাব এখানে হওয়ার কথা নয়। অনাহারে মৃত্যু তো নয়ই। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জনিত ভয়াবহ আর্থিক সংকট, ইংরেজ সরকারের লাগামহীন শাসন ও শোষণ, সরকারের উদাসীনতায় বেড়ে ওঠা জোতদার, মজুতদার ও মহাজনদের সীমাহীন লোভ, নিরন্ন মানুষের প্রতি উচ্চবিত্ত মানুষের উদাসীনতা এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বার্থপর মানসিকতা এক ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছিল। সোনার বাংলা যেন শ্মশানে রূপান্তরিত হয়, এবং ক্রমশ সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয়ের মধ্যে ডুবে যায় প্রায় সমস্ত মানবীয় সত্তা।
এই পরিস্থিতিতে মানবতাবাদী ও সাম্যবাদী ভাবনায় উদ্বুদ্ধ লেখক হিসেবে তিনি এই অনাহারি ছেলেটির সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন এবং চান এই পরিস্থিতির আশু অবসান। রচনার শেষ অংশে তাই লেখক সকলকে আহবান করেছেন তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। বলেন, গ্রাম গঞ্জ, কলে কারখানায় সমস্ত মানুষের বাহু আন্দোলিত হোক এবং পরস্পরের হাত মিলিত হোক যুদ্ধ আর অনাহারের বিরুদ্ধে। লেখকের বিশ্লেষণ, এভাবেই মিলবে কাঙ্খিত শান্তি এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিনি আবেদন করেছেন, “তোমরা হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো।”
---------xx---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন