“সেই সন্ধ্যায় কোথায় গেল রাজমিস্ত্রিরা?” — ২০১৫
ক) ‘সেই সন্ধ্যায়’ বলতে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?
খ) রাজমিস্ত্রিরা কী নির্মাণ করেছিল?
গ) এই নির্মানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো।
ঘ) এই প্রশ্নের মাধ্যমে বক্তা কি বলতে চেয়েছেন?
ঘ) এই প্রশ্নের মাধ্যমে বক্তা কি বলতে চেয়েছেন?
ক) ‘সেই সন্ধ্যায়’ বলতে কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে?
ক) বের্টোল্ট ব্রেখ্ট-এর লেখা ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ নামক অনুবাদ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের বিনিময়ে চিনের প্রাচীর গড়ে ওঠার প্রসঙ্গ এনেছেন।
‘সেই সন্ধ্যায়’ বলতে এখানে এই প্রাচীর তৈরীর কাজের সমাপ্তির দিন সন্ধ্যার কথা বোঝানো হয়েছে, যে সন্ধ্যার পর থেকে এইসব হতভাগ্য রাজমিস্ত্রিদের কেউ আর খোঁজ রাখেনি, জায়গা হয়নি প্রাচীর তৈরীর ইতিহাসের পাতায়ও।
খ) রাজমিস্ত্রিরা কী নির্মাণ করেছিল?
উদ্ধৃত অংশে উল্লিখিত ‘রাজমিস্ত্রীরা’ জীবন মরণ পণ করে চিন দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৈরি করেছিলেন সুবিশাল প্রাচীর। বিশ্বের সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে এটা অন্যতম। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকাতেও এর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।গ) এই নির্মানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো।
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত সময়ে চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এ প্রাচীর তৈরি শুরু করা হয়। ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৫ বছর। যা ইট আর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। এ সময় প্রায় একইরকম অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তবে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। এটি বর্তমান প্রাচীরের একেবারে উত্তরে অবস্থিত এবং এর খুব সামান্যই অবশিষ্ট আছে। বর্তমান প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়।গ) এই প্রশ্নের মাধ্যমে বক্তা কী বলতে চেয়েছেন?
সভ্যতার ইতিহাস অনালোকিত অধ্যায়গুলো ঘাটলেই দেখা যায়, মানব সভ্যতার প্রকৃত কুশি লব হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। ‘সাত দরজাওয়ালা থিবস’ থেকে ‘চিনের প্রাচীর’ — সব ক্ষেত্রেই লুকিয়ে রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের শ্রম ও জীবন উৎসর্গের অজানা কাহিনী। অথচ ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম গন্ধ নেই।
অন্যদিকে কিছু না করেই জগৎজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন সেই সময়ের রাজা রাজরারা। একটু যুক্তিবাদী ও অনুসন্ধিসু মন নিয়ে ভাবলেই বোঝা যায়, আমাদের পরিচিত পুঁজিবাদী ধারার ইতিহাস শুধুই রাজা কিংবা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জয়ধ্বনি করে, পুঁজিবাদী সমাজকে করে গৌরবান্বিত। অন্যদিকে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের অবদানকে কখনোই সে স্বীকৃতি দেয় না।
কবি বের্টোল্ট ব্রেখ্ট তাঁর এই কবিতার মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন মানব সভ্যতার ইতিহাসের এই সব নকল কান্ডারীদের বিরুদ্ধে এবং প্রকৃত কান্ডারীদের মানুষের সামনে তুলে আনার লক্ষ্যে। স্বীকৃতি দিতে চেয়েছেন যুগ যুগ ধরে আড়ালে থাকা সাধারণ মানুষের রক্ত ঘাম আশ্রমের বিনিময়ে গড়া এক নতুন ইতিহাসকে।
-------xx-------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন