“তোমরাও হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো।” — ২০১৬
ক) লেখক কাকে সাহায্য করতে বলেছেন?খ) তাকে কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
গ) কীভাবে সাহায্য করতে বলেছেন?
ক) লেখক কাকে সাহায্য করতে বলেছেন?
উদ্ধৃত অংশটি ‘আমার বাংলা’ পাঠ্যাংশের অন্তর্গত ‘হাত বাড়াও’ নামক রচনার অন্তর্ভুক্ত। এটি লিখেছেন সাম্যবাদী ঘরাণার লেখক ও প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
এই রচনায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় একজন ১২-১৩ বছর বয়সী কিশোরের কথা বলেছেন। সে দু’পায়ে নয়, চার হাত-পায়ে হাঁটে। কারণ, দীর্ঘ অনাহারে থাকতে থাকতে সে মাজা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তার হাতের আঙুল গুলো অত্যন্ত সরু। দূর থেকে দেখলে মনে হয় লোমহীন কোনো এক অদ্ভুত জন্তু। লেখক প্রত্যক্ষভাবে এই অনাহারি কিশোরকে সাহায্য করতে বলেছেন। তবে গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত সমস্ত বিপন্ন মানুষকে এখানে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।
খ) তাকে কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় একজন সাম্যবাদী ঘরানার লেখক। তাই তাঁর রচনায় মানবতাবাদ তথা ‘মানুষের শোষণ মুক্তির ভাবনা’ অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। এই ভাবনাই তাকে বুঝতে সাহায্য করে, সমাজ জুড়ে শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের অন্তর্নিহিত কারণ ঠিক কী? কীভাবে কারা এই বৈষম্যের জন্ম ও বেড়ে ওঠাকে উৎসাহিত করে। তিনি বুঝতে পারেন, এর অবসান, মোটেও সহজ কাজ নয়। সহজ নয় একা একা এর সমাধান করা। তাই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ও মনুষ্যত্ববোধের অধিকারী মানুষকে তিনি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন।
তিনি জানেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জনিত ভয়াবহ আর্থিক সংকট, ইংরেজ সরকারের লাগামহীন শাসন ও শোষণ, সরকারের উদাসীনতায় বেড়ে ওঠা জোতদার, মজুতদার ও মহাজনদের সীমাহীন লোভ, নিরন্ন মানুষের প্রতি উচ্চবিত্ত মানুষের উদাসীনতা এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের স্বার্থপর মানসিকতা এই ভয়ংকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। আলোচ্য রচনায় নিরন্ন কিশোরের জ্বলন্ত চোখের দৃষ্টিতে, এরা তাই সকলেই খুনি। এদের ষড়যন্ত্রে শহর ও গ্রামের অগণিত মানুষের গলায় পড়ছে মৃত্যুর ফাঁস। এই খুনিদের সনাক্ত করে সমাজ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমেই একমাত্র অর্জিত হতে পারে স্বাধীন ও সুখী জীবন। বস্তুত এভাবেই সারা বাংলা জুড়ে একদিন নেমে আসবে শান্তির আবহ। এ কাজ একার নয়। আর এ কারণেই লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় এই অনাহারি এবং উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রত কিশোরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন।
গ) কীভাবে সাহায্য করতে বলেছেন?
এই কিশোরের জলন্ত চোখ দুটো এই খুনিদের শাস্তি চায়। তবে সে চায়, এই শাস্তি আসুক শান্তির বার্তা নিয়ে। তাই মানুষ এগিয়ে আসুক, ঐক্যবদ্ধ হোক। এভাবে তাদের সাহায্যের হাত বাংলার বুক জুড়ে সবুজ মাঠে সোনালি ফসল ফলাক, আর তাতে জোরদার নয়, প্রকৃত চাষীর গোলা ভরে উঠুক। আর এভাবেই লক্ষ মানুষের গৃহকোণে, ছড়িয়ে পড়বে অনাবিল শান্তি।
অন্যদিকে, কারখানায় কারখানায়, বন্ধন মুক্ত মানুষ তার বলিষ্ঠ হাত আন্দোলিত করুক। মিলিত হোক যুদ্ধ আর অনাহারকে দূরে ঠেলে কোটি কোটি মানুষের স্বাধীন ও সুখী জীবনের খোঁজে। লেখক এই কঙ্কালসার নিরন্ন কিশোরের জ্বলন্ত চোখের চাহনিতে প্রত্যক্ষ করেছেন শান্তি প্রতিষ্ঠার এক দুর্নিবার চেষ্টা। তিনি দেখেছেন, যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের ঘন অন্ধকারকে ঠেলে তার জ্বলন্ত চোখ দুটো জেগে আছে আসমুদ্রহিমাচল এই বাংলাকে পাহারা দিতে। আর শান্তির লক্ষ্যে সে তার হাত দুটোকে মাটি থেকে ছাড়িয়ে দু’পায়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। লেখকের বিশ্বাস, এভাবেই সমস্ত মানুষের সমবেত হাত একদিন এই কিশোর তথা বঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের হাতের সঙ্গে মিলিত হবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে সেই কঙ্ক্ষিত শান্তি। তাই লেখক, মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী প্রত্যেক মানুষকে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে বলেছেন, যাতে সে উঠে দাঁড়াতে পারে, সমাজ পরিবর্তনের একজন অন্যতম কারিগর কারিগর হয়ে উঠতে পারে। রচনার শেষাংশে তাই আহ্বান করেছেন, “তোমরা হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো।
-----------xx----------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন