সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অরণ্য, অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ, ও মানব জীবন

 অরণ্য, অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ, ও মানব জীবন

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লৌষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা!

ভূমিকা :

৩ মার্চ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে ৩ মার্চকে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য প্রাণীকুল বাঁচাই’। বিশ্বের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদকুলের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই হল এই দিবসের মূল লক্ষ্য।

অরণ্য ও মানব জীবন :

সৃষ্টির শুরু থেকেই অরণ্য ছিল মানুষের পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যই দিয়েছে মানুষকে বেঁচে থাকার রসদ। নানা রকম ফলমূল সহ পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে, বাতাসে জলীয় বাষ্প প্রদান ও কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে মানব জীবনকে দিয়েছে সুরক্ষা। শুধু তাই নয়, অনেক জীবের বাসস্থানরূপেও কাজ করে আসছে এই অরণ্য। তাই গাছ কাটা হলে, পরিবেশের ভারসাম্যের পাশাপাশি বাস্তুতন্ত্রও ব্যাহত হয়।
সুতরাং অরণ্য ধ্বংস মানেই বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায়। আর এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি। এছাড়াও বন্যা,খরা ও ভুমিক্ষয় বেড়ে যাওয়া। কারণ, এগুলো রোধে অরণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অরণ্যপ্রাণী কারা :

গৃহপালিত প্রাণী ছাড়া বনে বসবাসরত সব প্রাণীই বন্যপ্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। দেয়ালের টিকটিকি থেকে শুরু করে আঙ্গিনায় বিচরণকারী কাক, চড়ুইও বন্যপ্রাণী। বন হল বন্যপ্রাণীর আবাস। ক্রমাগত বন ধংসের ফলে বন্যপ্রাণী খাদ্য সংগ্রহ আর আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ে এসে পড়ে আর মানুষের হাতে প্রাণ হারায়।

অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী ধ্বংসের কারণ :

সামান্য মৌসুমি ফল রক্ষায় মানুষ আজ কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখে আর তাতে জড়িয়ে প্রাণ হারায় নিরীহ পাখিরা। ক্ষতিপূরণের বিধান থাকা সত্ত্বেও গুটিকতক বুনোহাতির কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে বিদ্যুতের ফাঁদ পাতা হয়। ফলে, তাতে জড়িয়ে প্রাণ হারায় বুনোহাতি। কতটুকু অসহায় হলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে হানা দেয়, তা মানুষের অনুধাবন করা উচিত।

কিছু মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ আছে, যাদের হাজাররকম খাবার বাদ দিয়ে নজর পড়ে বন্যপ্রাণীর দিকে। আর তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য ঘৃণিত ও আইনবহির্ভূত পেশা বেছে নিয়েছে কিছুসংখ্যক শিকারি। কিছু মানুষের আবার আছে বন্যপ্রাণীর দেহাংশ সংগ্রহ করে শো-পিস হিসেবে প্রদর্শন করার অভ্যাস। ফলে লাগামহীনভাবে ধ্বংস হচ্ছে অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী।

অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা :

প্রকৃতির সবকিছুই পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক। কখনো তা প্রত্যক্ষভাবে, আবার কখনো পরোক্ষভাবে। আর এ কারণে কোন এক জীব গোষ্ঠী অবলুপ্ত হলে তার কুপ্রভাব পড়ে অন্যান্য জীবের উপর। সুতরাং বন্যপ্রাণী বা বন যে মানব জীবনের উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে — একথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মানুষের অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে ইতিমধ্যেই উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির এক বিরাট অংশ হারিয়ে গেছে প্রকৃতি থেকে। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিশ্ব উষ্ণায়নসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এর সর্বশেষ সংযোজন নতুন নতুন প্রাণঘাতী রোগের মহামারী। 

মনে রাখতে হবে, এখনও প্রতিদিন উজাড় হচ্ছে প্রায় ২ লাখ একর বন আর মারা পড়ছে ১৫০-২০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী! অরণ্য ধ্বংস হলে বন্যপ্রাণী অনন্যোপায় হয়েই লোকালয়ে আসে খাদ্য সংগ্রহ করতে। পরিণতিতে মানুষ ও বন্য প্রাণী উভয়েরই জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এই অবস্থা থেকে বের হতে হলে আমাদের বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী কর্তব্য হিসেবে গণ্য করতে হবে। বস্তুত এ কারণেই বিশ্বের বিবেচক মানুষরা আজ সোচ্চার বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে।

আরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের উপায় :

অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত —
১) বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় বিশ্বের সব নাগরিককে সোচ্চার আর সচেতন হতে হবে। যেখানেই বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে স্থানীয়দের। অপরাধীদের সংখ্যা খুবই অল্প।

২) নতুন প্রজন্মকে বন্যপ্রাণী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে কাজটা খুব সহজ হবে আর ভবিষ্যৎ পৃথিবী হবে নিরাপদ। সে জন্য প্রয়োজন প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত কারিকুলাম।

৩) শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের গল্প, উপন্যাস, ছড়া হোক পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হোক পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব। 

৪) প্রতিটি দেশে গড়ে তুলতে হবে অন্তত একটি করে প্রকৃতি বিশ্ববিদ্যালয়। তাহলেই আমরা পাব জীববৈচিত্র্যবান্ধব দেশ এবং নিরাপদ পৃথিবী।

৫) একটা গাছ কাটলে, তার বিনিময়ে অধিক সংখ্যক গাছ লাগাতে মানুষকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব :

সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ আর পরিবেশের অন্যান্য উপাদান দিয়ে। একেকটা বন্যপ্রাণী যেন একেকটা পুঁতি। পুঁতির মালা ছিন্ন হলেই যেমন পুঁতিরা বিপন্ন হয়ে পড়ে, তেমনি ভারসাম্য হারায় প্রকৃতি।

এরই প্রতিশোধ হিসেবে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। বজ্রপাত, সুনামি, সুপারসাইক্লোনসহ নানারকম প্রকৃতিক দুর্যোগ সময়ে-অসময়ে হানা দিয়ে জীবন-জীবিকা তছনছ করে দিচ্ছে। এছাড়া নির্বোধদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এসেছে নিপাহ্, করোনার মতো ভাইরাস।

উপসংহার :

সুদূর অতীতে বন্যপ্রাণী থাকত বনে, লোকচক্ষুর আড়ালে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিজেদের জটিল কিছু রোগ ব্যাধি থেকে মানুষ দূরে থাকতো, থাকতো সুরক্ষিত। কিন্তু কিছু মানুষের বিকৃত খাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং বন্য প্রাণীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্যবসা করার তাগিদে তাদের সান্নিধ্যে আসছে প্রতিনিয়ত। ফলে নিরাময় অযোগ্য এসব রোগ মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই মানব জাতিকে বাঁচাতে হলে, বন্যপ্রাণীকে সংরক্ষণ করতে হবে, লোকালয় থেকে দূরে রাখতে হবে। আর সংরক্ষণ করতে দরকার সুরক্ষিত বন বা অরণ্য। সুতরাং অরণ্য ও অরণ্য প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টির সঙ্গে মানব জীবনের সম্পর্ক গভীরভাবে সম্পর্কিত।
---------xx---------

এই প্রবন্ধটির অনুকরণে লেখা যাবে :

১) বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ।

২) বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা।

৩) অরণ্য অরণ্য সম্পদ এবং অরণ্য প্রাণীর সংরক্ষণের গুরুত্ব।

মন্তব্যসমূহ

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট...

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদ...

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্...

বাংলার ঋতুরঙ্গ বা বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য

 বাংলার ঋতুরঙ্গ বা ঋতু বৈচিত্র্য বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। — জীবনানন্দ দাস ভূমিকা : ঋতুবৈচিত্র্যের বর্ণিল উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিপূর্ণ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র্যময় ঋতুরূপ। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে এই বাংলায়। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপা। বাংলা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ একে ‘ রূপসী বাংলা ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঋতু বৈচিত্রের কারণ : বাংলাদেশ  কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়াতে তাই নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানেই রয়েছে বাংলার ঋতু বৈচিত্রের মূল চাবিকাঠি।  নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত এখানে হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। ছয় ঋতুর ‘রূপসী বাংলা’ : বাংলার এই ছটি ঋতু যেন বিনি সুতোয় গাঁথা মালার মতো। এই মেলায় পর পর গাঁথা আছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতি ...

কবিতা 'মহুয়ার দেশ' - কবি সমর সেন

কবিতা : মহুয়ার দেশ কবিতা : 'মহুয়ার দেশ কবি : সমর সেন ১ মাঝে মাঝে সন্ধার জলস্রোতে পলাশ সূর্য দেয় এঁকে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ, আর আগুন লাগে জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়। সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায় ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে শীতের দুঃস্বপ্নের মতো। অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ, সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য, আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে। আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল নামুক মহুয়ার গন্ধ।                                             ২                                             এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে                                    ...

রচনা : মৃণাল সেন

প্রবন্ধ রচনা : মৃণাল সেন ভূমিকা : মৃণাল সেন ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও লেখক। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে এক বন্ধনীতে উচ্চারিত হতো তার নামও। জন্ম ও শিক্ষাজীবন :  মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম । এখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এর পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন। পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাথমিক কর্ম :  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপণনকারী হিসাবে কাজ শুরু করেন। চল্লিশের দশকে মৃণাল সেন ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর চলচ্চিত্রে শব্দকুশলী হিসেবেও কাজ শুরু করেন। রাজনৈতিক দর্শন :  আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী মৃণাল সেন দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হন। ছবি পরিচালনা : বাংলা, ওড়ইয়আ, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র পরিচালনা করে তিনি বহুভাষিক চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতি...

প্রবন্ধ : ভগিনী নিবেদিতা

ভগিনী নিবেদিতা ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে ভগিনী নিবেদিতার নাম। পৈত্রিক সূত্রে তিনি ছিলেন স্কচ। আধুনিক ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী ও ধর্মনেতা স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা নেন। ভারতে সমাজ সেবা ও নারী শিক্ষার প্রসারেও নিবেদিতার ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জন্ম ও বংশ পরিচয় : ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডানগ্যানন শহরে মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেল ছিলেন ধর্মযাজক। মায়ের নাম মেরি ইসাবেলা। মাত্র দশ বছর বয়সে মার্গারেটের বাবা মারা যান। তারপর তাঁর দাদামশাই তথা আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হ্যামিলটন তাঁকে লালনপালন করেন। শিক্ষাজীবন : মার্গারেট লন্ডনের চার্চ বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর হ্যালিফ্যাক্স কলেজে তিনি ও তাঁর বোন মেরি পড়াশোনা করেছিলেন। কর্মজীবন : ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে, সতেরো বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ করে মার্গারেট শিক্ষিকার পেশা গ্রহণ করেন। দু’বছরের জন্যে কেসউইকের একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ান। এরপরে একে ...

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ...

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ

মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় এর চরিত্র আলোচনা কর মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র বিশ্লেষণ 👉 ভূমিকা : সমাজ সচেতন কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ছোটগল্প ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’। ১৯৪৩ সালের ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তিনি রচনা করেছেন এই গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দিয়ে এঁকেছেন একের পর এক দৃশ্যপট। এই দৃশ্যপটগুলো বিশ্লেষণ করলেই ধরা পড়ে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ। 👉  মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্র 👉 মানব দরদী মন : শহর কলকাতায় অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎই একদিন মৃত্যুঞ্জয় ‘অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য’ প্রত্যক্ষ করে। মানুষের এই মৃত্যুবরণ তার দরদি মনের গভীরে তৈরি করে অপূরণীয় ক্ষত। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। 👉 পরোপকারী ইচ্ছা শক্তি : এদিকে, কীভাবে এই মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা যাবে, সেই ভাবনায় তার হৃদয়মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, খাওয়া-ঘুম ছুটে যায়। সিদ্ধান্ত নেয়, নিজের সর্বস্ব দিয়ে এই মৃত্যুর বিরুদ্ধে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। 👉 আবেগপ্রবণ : মৃত্যুঞ্জয়ের মন...

শিকার। কবিতা - কবি জীবনানন্দ দাশ

কবিতা। শিকার - কবি জীবনানন্দ দাশ ভোর; আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল : চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ। একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে : পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গোধূলিমদির মেয়েটির মতো; কিংবা মিশরের মানুষী তার বুকের থেকে যে-মুক্তা                আমার নীল মদের গেলাসে রেখেছিলো হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তেমনি — তেমনি একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনও। হিমের রাতে শরীর ‘উম্’ রাখবার জন্য দেশোয়ালীরা                  সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলেছে— মোরগ ফুলের মতো লাল আগুন; শুকনো অশ্বত্থপাতা দুমড়ে এখনও আগুন জ্বলছে তাদের; সূর্যের আলোয় তার রং কুঙ্কুমের মতো নেই আর; হ’য়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো। সকালের আলোয় টলমল শিশিরে চারিদিকের বন ও আকাশ                          ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে। ভোর; সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে সুন্দরীর বন থ...