সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ছাত্র জীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার

ছাত্র জীবনের সৌজন্য ও শিষ্টাচার

মানব জীবনে শিষ্টাচার, ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ভদ্রতা আত্মীয়তার চেয়ে কিছু কম এবং সামাজিকতার চেয়ে কিছু বেশি।

ভূমিকা?

ইংরেজীতে যাকে বলে Etiquette; good manners; formality; বাংলায় তাকেই বলে শিষ্টাচার। মানবজীবনের অত্যাবশ্যক গুণাবলির অন্যতম হল এই সৌজন্য ও শিষ্টাচার। দেহের সৌন্দর্ৎ বৃদ্ধি পায় যেমন অলঙ্কারে, তেমনি আত্মার সৌন্দর্য বাড়ে শিষ্টাচারে। অলঙ্কার বাইরের সামগ্রী আর শিষ্টাচার অন্তরের। এবং সৌজন্যবোধ হলো তার মার্জিত প্রাত্যহিক জীবনচর্চা।

সৌজন্য ও শিষ্টাচারের বৈশিষ্ট্য :

১) জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে শিষ্টাচার, ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধ অপরিহার্য। চলনে-বলনে, আচরণে, পোশাক-পরিচ্ছদে এবং ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য ও চারিত্রিক দীপ্তি প্রকাশেও এই গুণগুলো ক্রিয়াশীল থাকা জরুরি।

২) ঘরে বাইরে সর্বত্র শিষ্ট ও সৌজন্যমূলক আচরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে শিষ্টাচার হল একটি অপরিহার্য চারিত্রিক সম্পদ এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক ঐশ্বর্য

৩) শিষ্টাচার বা সৌজন্যবোধ নিজের অসুবিধা সত্ত্বেয় পরের সুবিধা করে দিতে উৎসুক থাকে। শুধুমাত্র  আত্মসুখ ও আত্মসমৃদ্ধি খোঁজে না

৪) এই গুণের অধিকারী মানুষকে বলা হয় ভদ্রলোক

৫) মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য নিরূপন হয় এই গুণাবলীর নিরিখেই। দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, ‘দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুর মতো।’

শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা :

সমাজ জীবনের ভারসাম্য, শৃঙ্খলা, উন্নতি ও অগ্রসরতা অব্যাহত রাখতে পারস্পরিক শিষ্টাচার, ভদ্রতা, সৌজন্যতা ও অন্যান্য মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। এককথায়, শিষ্টাচার হচ্ছে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
১) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে মার্জিত রুচি ও সুন্দর মনের পরিচয় দিতে,
২) পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সর্বাত্মক সুন্দর করে তুলতে,
৩) জাতিতে জাতিতে বিরোধ, দ্বন্দ্ব থেকে পরিত্রান পেতে,
৪) সমাজে ও রাষ্ট্রে সুশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে,
৫) একে অপরের সুবিধা-অসুবিধা, মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে চলতে,
৬) শোভন, সুন্দর ও প্রীতিময় আদব-কায়দার অনুশীলন করতে,
৭) ব্যাক্তি স্বাধীনতা বজায় রাখতে ও গনতান্ত্রিক পথ সুগম করে তুলতে,
৮) জাতিকে নতুন প্রাণ স্পন্দনে অনুপ্রাণিত করে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে, 
৯) মানব জীবনের সার্বিক কল্যাণ করতে,
১০) একটি আদর্শ সমাজ গঠন করতে, প্রয়োজন সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অনুশীলন।

শিষ্টাচার ও ভদ্রতার :

অনেকে শিষ্টাচার ও ভদ্রতার মধ্যে একটি সীমারেখা টেনে দেন। তাদের মতে শিষ্টাচার আন্তরিক গুণ, আর ভদ্রতা বাহ্যিক আচরণ মাত্র। ভদ্রতা অনেক সময়েই শুধু মৌখিক ও কৃত্রিম হয়ে থাকে; কিন্তু শিষ্টাচার মার্জিত রুচিসম্পন্ন হৃদয়ের নিজস্ব গুণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ দু’টিকে পরস্পরের থেকে আলাদা করে যায় না। মৌখিকই হোক বা আন্তরিকই, অপরের প্রতি ভদ্র ব্যবহার করাই শিষ্টাচার। অধিকন্তু মৌখিকভাবে ভদ্র ব্যবহার করতে করতেই তা একদিন আন্তরিক গুণে পরিণত হতে পারে।মানুষের সদগুণাবলীর মধ্যে শিষ্টাচার যে অন্যতম প্রধান গুণ এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একারনেই নেপলিয়ন বলেছিলেন, ‘The greatest ornament of an illustrious life is modesty and humility’।

শিষ্টাচার ও সৌজন্য  :

আক্ষরিকভাবে মার্জিত ও ভদ্র পরিশীলিত আচরণই শিষ্ঠাচার নামে পরিচিত। ব্যুৎপত্তিগত অর্থ থেকে সুজনের ভাবকে আমরা ‘সৌজন্য’ বলি। তাই তার যে ব্যবহারিক অর্থ আমাদের মধ্যে প্রচলিত তার সাথে শিষ্টাচারের বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং শিষ্টাচার ও সৌজন্যকে সমার্থক রূপেই সাধারণত গণ্য করা যায়। 

শিষ্টাচার, ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক :

অপরের সুবিধা-অসুবিধা, মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান করে চলাই শিষ্টাচার ও সৌজন্যের লক্ষ্য। তা থেকে বুঝা যায় শিষ্টাচার ব্যক্তিগত গুণ হলেও সমাজের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। বস্তুত তা একটি স্বাভাবিক গুণ। এবং এই শিষ্টাচার ও সৌজন্য ব্যক্তি জীবনকে সফল ও জনপ্রিয় করে তোলে।

বিদ্যা, পাণ্ডিত্য ও শিষ্টাচারের সম্পর্ক

প্রসঙ্গত স্মরণীয়, বিদ্যা ও পাণ্ডিত্যের সাথে শিষ্টাচারের বিশেষ সম্পর্ক নেই। খ্যাতনামা পণ্ডিতও অশিষ্ট হতে পারেন। তবে একথা ঠিক যে, প্রকৃত বিদ্যা যেমন বিনয় দান করে, তেমনি তা মানুষকে শিষ্ট এবং সুজন হতে শিক্ষা দেয়। 

শিষ্টাচারি হওয়ার উপায় :

শিষ্টাচার ও ভদ্রতা শিক্ষার বিষয়। কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত হলেই যে এগুলো অর্জন করা যায় বিষয়টা এমন নয়। এর জন্য কোনো রকম অর্থ ব্যয় হয় না বটে; কিন্তু সাধনার প্রয়োজন। অন্যান্য গুণের মতো এ গুণটির শিক্ষাকালও শৈশব ও ছাত্রজীবন। ছাত্রজীবনে যে শিক্ষা দেওয়া হয় কর্মজীবনেও তা আমাদের প্রভাবিত করে। ছাত্রজীবনে শিষ্ট না হতে পারলে কর্মজীবনেও আমরা সফলতা লাভ করতে পারব না।

১) পরিবারের ভূমিকা :

শিষ্টাচারের বীজ মূলত বপিত হয় শিশুকালে। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা প্রধান। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। পরিবারের বড়রা যে রকম ব্যবহার করে, শিশুরা তাই অনুকরণ করে। বাল্যকালে শিশুদের সংযম, বিনয় ও উন্নত রুচির চর্চা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলে।

২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের ভূমিকা :

একাডেমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া যায়, মেধাবী হলে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও নাম কুড়ানো যায়; কিন্তু পরিবার থেকে সুশিক্ষা ও মূল্যবোধ না পেলে একসময় সব শিক্ষাই ম্লান হয়ে যায়। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-স্নেহ, পরোপকার, উদার মানসিকতা- এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব বেশি অর্জন করা যায় না। এগুলোর ভিত্তি প্রোথিত হয় পারিবারিক মূল্যবোধ লালন-পালন ও সুশিক্ষার মাধ্যমে।

শিষ্টাচারের গুরুত্ব :

শিষ্টাচারহীন মানুষ কেবল আকৃতির দিক থেকেই মানুষ, তাদের মনুষ্যত্বের কোনো বিকাশ ঘটে না।

মানুষ আদিমকালে, মানুষ শিষ্টাচারের কোনো আবশ্যকতাই অনুভব করেনি। কিন্তু যখন মানুষ সমাজবদ্ধ হল, তখন থেকেই তাদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের আবির্ভাব ঘটে। আর সেগুলোকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্যই প্রয়োজন হয় শিষ্টাচারের।

সমাজে বাস করতে হলে বিভিন্ন জনের সংস্পর্শে আসতেই হয় এবং তাদের সঙ্গে প্রীতি, সৌজন্যবোধ ও সখ্যতা বজায় রাখতে হয়। একমাত্র শিষ্টাচারের মাধ্যমেই তা সম্ভবপর।

সমাজের বসবাসকারী লোকের সঙ্গে কেউ যদি অশিষ্ট অভদ্র আচরণ করে, তবে সে স্বভাবতই তাদের বিরাগভাজন হয়ে পড়ে এবং ব্যক্তিগতভাবে আপনার জীবনের সাফল্যকে বিঘ্নিত করে।

 শিষ্টাচার মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি তার ভদ্র ও সংযত ব্যবহার দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে।

পৃথিবীতে যারা মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তারা শিষ্টাচার ও মার্জিত ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। তবে এগুণ হঠাৎ করে কারো মধ্যে গড়ে ওঠে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতি, সাধনা ও শিক্ষা।

আপামর স্বার্থেও সামাজিক মানুষের পক্ষে শিষ্টাচার অপরিহার্য। মানুষের সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তিকে তাই সহজলভ্য করে তুলতে পারে।

শিষ্টাচার ও সৌজন্য ব্যক্তি জীবনকে সফল ও জনপ্রিয় করে তোলে।

ছাত্রজীবন ও শিষ্টাচার

বিদ্যালয় শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক শিক্ষা অর্জনেরও আদর্শ সময় ছাত্রজীবন। কাজেই ছাত্রজীবন থেকেই আমাদের শিষ্টাচার এবং সৌজন্য শিক্ষায় প্রয়াসী হওয়া দরকার। শিষ্টাচার ও সৌজন্যের ছোঁয়াতেই একজন ছাত্র ভদ্র ও বিনয়ী হয়ে ওঠে। কাজেই ব্যক্তির সামাজিকীকরণ এবং সুখী-শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও ছাত্রজীবন থেকেই আমাদের সৌজন্য ও শিষ্টাচার শেখা একান্তভাবে জরুরি।

উপসংহার :

সমস্ত সদগুণাবলির মধ্যে সৌজন্য ও শিষ্টাচার যে অন্যতম প্রধান গুণ এ বিষয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। সন্দেহ নেই, এই দুইয়ে মিলেই ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথকে মসৃণ করে তোলে। এ কারণেই Oscar Wild তাঁর "The importance of Be ing Earnest-এ লিখেছেন, "Courtesy and Politeness are the basic principles which directs human life smoothly." সুতরাং ছাত্রজীবন থেকেই এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া দরকার। স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে, সভা-সমিতিতে বাসে ট্রেনে সমস্ত জায়গাতেই সৌজন্য ও শিষ্টাচারের চর্চা দরকার। শুধু সামাজিক নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনেও শিষ্টাচারের চর্চা আবশ্যক। কারণ, শিষ্টাচার একটি দেশ ও জাতির উন্নত মননের প্রতীক। তাই ছাত্রজীবনেই শপথ নিতে হবে শিষ্টাচার বিশিষ্ট জীবন ও সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে।
---------xx--------

মন্তব্যসমূহ

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি - সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর

বাংলা বই : দ্বাদশ শ্রেণি । প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা বই - দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চমাধ্যমিক 'বাংলা বই'য়ে👨তোমাকে স্বাগত 💁 তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরটি পেতে ওপরের মেনু বারের বিষয় মেনুতে ক্লিক করো । গল্পের প্রশ্ন চাইলে ‘ গল্পের  প্রশ্ন’  ট্যাবে , কবিতার প্রশ্ন চাইলে ‘ কবিতার প্রশ্ন’ ট্যাবে ক্লিক করো ।  এভাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ের  ট্যাবে  ক্লিক করে প্রশ্নের পাতায় যাও। সেখানে দেওয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রশ্ন ও উত্তর খোঁজ। অথবা নিচের প্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করো। সকলের জন্য শুভকামনা রইল। বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর পেতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো। ১)  দ্বাদশ শ্রেণির গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ২)  দ্বাদশ শ্রেণির কবিতা 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৩)  দ্বাদশ শ্রেণির নাটক 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৪)  আন্তরজাতিক কবিতা ও ভারতীয় গল্প 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৫)  দ্বাদশ শ্রেণির পূর্নাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ  👉  প্রশ্ন ও উত্তর ৬)  দ্বাদশ শ্রেণির শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস 👉   প্রশ্ন ও উত্তর ৭)  দ্বাদশ শ্রেণির ভাষা বিভাগ 👉   প্রশ্ন ও উত্তর   ৮)  দ্বাদশ শ্রেণির প্রবন্ধ  👉   প্রবন্ধের তালিকা ৯)  দ্বাদশ শ্রেণির প্রুফ সংশোধন  👉   নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর ১

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা

দিল্লী, তুমি এমন হলে কেন? দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা  শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের কবিতা Poems of Bahadur Shah Zafar II রেশমখানি অঙ্গে ধরে তব ধাঁধিয়েছিলে আমার দুটি চোখ, আধফোটা ফুল হৃদয়কমলতলে এই ঋতুরাজ তোমার সঙ্গী হোক। প্রাণের সাথে চলে প্রাণের খেলা তেমনি ছিলে ঘ্রাণের মত মোর সময় হলে সবার যেতে হয়- তুমিও গেলে ভেঙে সুখের দোর। অধর ছুঁয়ে অধর কথা বলে হৃদয় জানে ব্যথার গোপন সুর পাছে তোমার ভালবাসায় পড়ি তোমায় ছেড়ে যাচ্ছি বহু দূর আশার আলো নিভছে চিরতরে মনকে আমি বোঝাই নাকো আর ধুলোয় ছিলাম, ধুলোয় ফিরে যাব আমায় আজ কারই বা দরকার? দিল্লী তুমি আমার দেবপুরী আদর যেন বইত হাওয়ার ভেলা এখন তুমি জ্বলতে থাকা চিতা জমতে থাকা কান্না, অবহেলা। রাস্তা জুড়ে শবের স্তুপ জমে চোখের জল শুকিয়ে গেছে যেন মৃতেরা সব নেই তো কোনখানে দিল্লী, তুমি এমন হলে কেন? ছিন্ন হৃদয়, ছিন্ন মাংস-হাড় মনন জ্বলে দীর্ঘ সব শ্বাসে রক্তপুরী, সব হারাদের দেশ আমার চোখ সজল হয়ে আসে। চিরটাকাল সঙ্গে কে আর থাকে? সবার ভাগ্যে সব ভাল কি সয়? মনে ভাবি পরম নবীর বাণী সকল কিছু ভালোর জন্য হয়। অনুবাদ করেছেন কৌশিক মজুমদার

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ

ভারতের জাতীয় সংহতি ও বিছিন্নতাবাদ নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্ — অতুল প্রসাদ সেন  ভূমিকা : জাতীয় সংহতি হল একটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা। এর অর্থ হল, আমাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও, আমরা এই সত্যকে স্বীকার করি যে, আমরা সবাই এক। এটি কেবল একটি জাতীয় অনুভূতি নয়, এটা সেই চেতনা যা সমস্ত উপভাষা ও বিশ্বাসের মানুষকে একই প্রচেষ্টায় একত্রিত করে। জাতীয় একীকরণের সংজ্ঞা: ডাঃ এস. রাধাকৃষ্ণ বলেছেন, national integration cannot be made by bricks and mortar, mould and hammer, but it quietly grows in people’s minds through education.1️⃣ এইচ এ গণি সংজ্ঞায়িত করেছেন, “National integration is a socio-psychological and educational process through which a feeling of unity and harmony develops in the hearts of the people and a sense of common citizenship or feeling of loyalty to the nation is fostered among them”2️⃣ এককথায়, জাতীয় সংহতির ধারণার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ

নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ  নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্রের বিশ্লেষণ করো। নিখিলের চরিত্র বিশ্লেষণ সূচনা : মার্কসবাদী কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে নিখিল একজন সহযোগী চরিত্র। সম্পর্কে কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী ও বন্ধু। কথকের বর্ণনায় সে একজন ‘রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু অলস প্রকৃতির লোক’। বন্ধু বৎসল মানুষ : তবে নিখিল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল মানুষ। তাই সে মৃত্যুঞ্জয়কে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে তার ভাবনায় অসঙ্গতি কোথায়। শুধু তাই নয়, নানাভাবে সে মৃত্যুঞ্জয় ও তার পরিবারের পাশে থাকে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তরিক ও মানবিক : নিখিল আবেগ অনুভূতিহীন মানুষ নয়। নিরন্ন মানুষের অসহায় মৃত্যু এবং কিছু না করতে পারার যন্ত্রণায় যখন মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ ছল ছল করে ওঠে, তখন নিখিলের মনটাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের কারণেই সে প্রতি মাসে তিন জায়গায় নিয়মিত অর্থ সাহায্যও পাঠায়। যুক্তিবাদী চিন্তা: তবে নিখিল অত্যন্ত যুক্তিবাদী। সে জানে, রিলিফ মানে আসলে একজন

বাংলার ঋতুরঙ্গ বা বাংলা ঋতু বৈচিত্র্য

 বাংলার ঋতুরঙ্গ বা ঋতু বৈচিত্র্য বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। — জীবনানন্দ দাস ভূমিকা : ঋতুবৈচিত্র্যের বর্ণিল উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিপূর্ণ। সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা এই বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বৈচিত্র্যময় ঋতুরূপ। ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে পর্যায়ক্রমে ছয়টি ঋতু ঘুরে ফিরে আসে এই বাংলায়। প্রতিটি ঋতুই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে অপরূপা। বাংলা প্রকৃতির এই অপরূপ রূপে মুগ্ধ হয়ে জীবনানন্দ দাশ একে ‘ রূপসী বাংলা ’ বলে অভিহিত করেছেন। ঋতু বৈচিত্রের কারণ : বাংলাদেশ  কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থিত। এখানকার আবহাওয়াতে তাই নিরক্ষীয় প্রভাব দেখা যায়। এখানেই রয়েছে বাংলার ঋতু বৈচিত্রের মূল চাবিকাঠি।  নভেম্বর হতে মার্চ পর্যন্ত এখানে হালকা শীত অনুভূত হয়। মার্চ হতে জুন মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল চলে। জুন হতে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এসময় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত। ছয় ঋতুর ‘রূপসী বাংলা’ : বাংলার এই ছটি ঋতু যেন বিনি সুতোয় গাঁথা মালার মতো। এই মেলায় পর পর গাঁথা আছে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতি দুই মাস অন্তর

কবিতা : পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন - বের্টোল্ট ব্রেখট

‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ - বের্টোল্ট ব্রেখট পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন - বের্টোল্ট ব্রেখট বের্টোল্ট ব্রেখ্ট কে বানিয়েছিল সাত দরজাঅলা থি? বইয়ে লেখে রাজার নাম। রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত? আর ব্যাবিলন এতবার গুঁড়ো হল, কে আবার গড়ে তুলল এতবার? সোনা- ঝকঝকে লিমা যারা বানিয়েছিল তারা থাকত কোন বাসায়? চিনের প্রাচীর যখন শেষ হল সেই সন্ধ্যায় কোথায় গেল রাজমিস্ত্রিরা? জয়তোরণে ঠাসা মহনীয় রোম। বানাল কে? কাদের জয় করল সিজার? এত যে শুনি বাইজেনটিয়াম, সেখানে কি সবাই প্রাসাদেই থাকত? এমনকী উপকথার আটলান্টিস, যখন সমুদ্র তাকে খেল ডুবতে ডুবতে সেই রাতে চিৎকার উঠেছিল ক্রীতদাসের জন্য। ভারত জয় করেছিল তরুণ আলেকজান্ডার। একলাই না কি? গলদের নিপাত করেছিল সিজার। নিসেন একটা রাঁধুনি তো ছিল? বিরাট আর্মাডা যখন ডুবল স্পেনের ফিলিপ কেঁদেছিল খুব। আর কেউ কাঁদেনি? সাত বছরের যুদ্ধ জিতেছিল দ্বিতীয় ফ্রেডারিক। কে জিতেছিল? একলা সে? পাতায় পাতায় জয় জয়োৎসবের ভোজ বানাত কারা? দশ-দশ বছরে এক-একজন মহামানব খরচ মেটাত কে? কত সব খবর! কত সব প্রশ্ন! -------xx------ 📔 এই কবিতার প্রশ্নোত্তর পেতে এখানে ক্লিক করো । ভাষান্ত

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার

ছোটগল্প হিসেবে 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটির সার্থকতা বিচার : ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক ছোটগল্প হিসেবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কে বাঁচায়, কে বাঁচে' গল্পটি কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো। ছোটগল্প হিসাবে ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ কতটা সার্থক 👉 ভূমিকা : ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্ত সহজ সরল, ........ অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ। কথাগুলো বলেছিলেন বাংলা ছোটগল্পের সার্থক রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিতার ছন্দে বলা এই অংশতেই রয়েছে সার্থক ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যে র যথাযথ বিবরণ। এডগার অ্যালান পো -এর মতে, যে গল্প অর্ধ থেকে এক বা দুই ঘণ্টার মধ্যে এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়, তাকে ছোটগল্প বলে। ছোটগল্পে জীবনের সামগ্রিক দিকটি উপন্যাসের মতো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত না হয়ে, তার খণ্ডাংশ নিয়ে পরিবেশিত হয়। এজন্য ছোটগল্প যথাসম্ভব বাহুল্যবর্জিত, রসঘন ও নিবিড় হয়ে থাকে। সংগত কারণেই এতে চরিত্রের সংখ্যা হয় খুবই সীমিত। ছোটগল্পের প্রারম্ভ ও প্রাক্কাল সাধারণত এবং খানিকটা নাটকীয়ভাবেই শুরু হয়। 👉   ছোটগল্পের বৈশ

অমৃতের পুত্র মানুষ

“অমৃতের পুত্র মানুষ।” অমৃতের পুত্র মানুষ ক) কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এর এই উক্তি? খ) ‘অমৃতের পুত্র’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? গ) এই মানুষটির (অমৃতের পুত্র) বর্ণনা দাও। ঘ) এই উক্তির মাধ্যমে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন? অথবা , এই উক্তির তাৎপর্য কী? অথবা , এই উক্তির মধ্য দিয়ে লেখকের কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে? ক) কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এর এই উক্তি? সমাজ সচেতন প্রাবন্ধিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমার বাংলা’ প্রবন্ধ সংকলন থেকে নেওয়া ‘হাত বাড়াও’ রচনা থেকে উদ্ধৃত অংশটি গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে কথিত রাজবাড়ীর বাজার থেকে ফরিদপুরে ফেরার জন্য লেখক স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মিলিটারি ছাউনির পাশে একটা অদ্ভুত জন্তু দেখতে পান। অদ্ভুত এই জন্তু যেন চার পায়ে ভর দিয়ে এগিয়ে আসছে। আরো একটু এগিয়ে এলে তিনি দেখতে পান রাস্তার ধুলো থেকে সে কী যেন খুঁটে খাচ্ছে। ঠিক মানুষের হাতের মতো তার সামনের থাবা দুটো। আঙুলগুলো বড্ড বেশি সরু। গায়ে এক ফোটা লোম নেই। একটু পরে, সামনাসামনি আসতেই তিনি স্তম্ভিত হয়ে আবিষ্কার করেন —এটা কোন জন্তু নয়, একজন মানুষ। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা এবং স্তম্ভিত হয়ে যাবার

সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সহমরণ — সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘জিজ্ঞাসি’ছ পড়া কেন গা’? শুনিবে তা’? — শোন তবে মা — দুখের কথা ব’ল্ ব কা’রে বা! ************************* জন্ম আমার হিদুঁর ঘরে, বাপের ঘরে, খুব আদরে, ছিলাম বছর দশ; কুলীন পিতা, কুলের গোলে, ফেলে দিলেন বুড়ার গলে; হ’লাম পরের বশ। আচারে তার আস্ ত হাসি, — ব’লব কি আর পরকাশি, — মিটল সকল সাধ; — হিঁদুর মেয়ে অনেক ক’রে শ্রদ্ধা রাখে স্বামীর ’পরে তা’তেও বিধির বাদ। বুড়াকালের অত্যাচারে,— শয্যাশায়ী ক’রলে তা’রে জেগেই পোহাই রাতি; দিন কাটেত’ কাটে না রাত, মাসের পরে গেল হঠাৎ, — নিবল জীবন বাতি। ********************** কতক দুঃখে, কতক ভয়ে শরীর এল অবশ হ’য়ে ভাঙল সুখের হাট খ’য়ের রাশি ছড়িয়ে পথে, চল্ ল নিয়ে শবের সাথে,— যেথায় শ্মশান ঘাট। গুঁড়িয়ে শাঁখা, সবাই মিলে, চিতায় মোরে বসিয়ে দিলে, বাজ্ ল শতেক শাঁক; লোকের ভিড়ে ভরেছে ঘাট, ধুঁইয়ে উঠে চিতার কাঠ, উঠ্ল গর্জ্জে ঢাক। ******************** রোমে, রোমে, শিরায়, শিরায়, জ্বালা ধরে, —প্রাণ বাহিরায়,— মরি বুঝি ধোঁয়ায় এবার! আচম্বিতে—চিৎকার রোলে— চিতা ভেঙে, পড়িলাম জলে, মাঝি এক নিল নায়ে তার। যত লোক করে ‘মার

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

প্রবন্ধ রচনা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত একাধারে একজন মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মায়ের নাম জাহ্নবী দেবী। শিক্ষাজীবন : মধুসূদন দত্ত শিক্ষা গ্রহণ পর্ব শুরু হয় মায়ের তত্ত্বাবধানে সাগরদাঁড়ির পাঠশালায়। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতা আসেন এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।  এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে।  এই উদ্দেশ্যেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্র