“উচ্ছবের হঠাৎ মনে হয় কলকাতা গিয়ে খেয়ে মেখে আসি।”
খ) উৎসবের হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
গ) উৎসবের আশা কতটা পূরন হয়েছিল?
ক) উচ্ছব কে? তার পরিচয় দাও।
প্রখ্যাত কথাকার মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘ভাত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র উৎসব নাইয়া। সুন্দরবনের বাদাবন অঞ্চলে তার বসবাস। লেখাপড়া না জানা গ্রামীণ মানুষের উচ্চারণে উৎসব নামটা ‘উচ্ছব’ হিসেবে উচ্চারিত হয়। এই উৎসব নাইয়াই এখানে উচ্ছব নামে পরিচিত।
খ) উৎসবের হঠাৎ এরকম মনে হওয়ার কারণ কী?
দুর্যোগের আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উৎসবের বুদ্ধি লোক পায়। বউ-ছেলেমেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশায় ভেঙে পড়া ঘরের চালের সামনে পাগল প্রায় হয়ে বসে থাকে।
তাই সরকারের দেয়া রান্না খিচুড়ি তার আর খাওয়া হয়নি। যেদিন সম্বিত ফিরল, তখন আর খিচুড়ি নেই। শুধুই শুকনো চাল দেওয়া হচ্ছে। অগত্যা উৎসব সেই চাল চিবিয়ে জল খেয়ে দিন কাটাতে থাকে। এই সময় মাঝে মাঝেই তার মনে পড়ে দুর্যোগের সেই রাতটার কথা। কিন্তু কোন কথা গুছিয়ে সে ভাবতে পারেনা। মাথার ভিতরটা ঝিমঝিম করে। গুছিয়ে ভাবতে গেলে মনে পড়ে সতীশ মিস্ত্রির ধানে মড়ক লাগার কথা। কখনো তার মনে হয় দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খেয়ে সে যেন প্রেত হয়ে গেছে। পেট পুরে দুটো ভাত খেতে পেলেই সে পুনরায় মানুষ হয়ে উঠবে এবং বউ ছেলেমেয়েদের দুঃখে প্রাণ খুলে কাঁদতে পারবে, গুছিয়ে কথা বলতে পারবে। এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে হয় কলকাতায় গিয়ে কিছুদিন সে খেয়ে মেখে আসবে। কারণ, গ্রাম সম্পর্কিত বোন বাসিনীর কাছে সে শুনেছে, তার মনিবের বাড়িতে হেলাঢেলা ভাত। আর এই ভাবনা থেকে সে কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গ) উৎসবের আশা কতটা পূরণ হয়েছিল?
পেট ভরে ভাত খাওয়ার আশায় উৎসব কলকাতায় এসেছে। বাসিনীর মনিবের বাড়িতে হেলাঢেলা ভাত। বাড়ির বড়কর্তার ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, আশা নেই। তাই শেষ রক্ষার তাগিদে যজ্ঞির আয়োজন। উৎসব কাঠ কাটার দায়িত্ব পায়। বিনিময়ে সে পেট ভরে ভাত খেতে পাবে। পেটের খিদে নিয়েই সে আড়াই মন কাঠ কাটে। ভাতের হুতাশে। পাঁচ ভাগে কাঠ রেখে আসে দালানে। উঠোনে কাঠের কুচো আর টুকরোগুলো সব ঝুড়িতে তুলে উঠোন ঝাঁট দেয়। যজ্ঞ মিটলেই সে ভাত খাবে। তান্ত্রিকের নতুন বিধান এটাই। অপেক্ষা করে উৎসব। কিন্তু যোগ্য শুরু হওয়ার মুখেই খবর আসে বুড়ো কর্তা মারা গেছেন। অশুচ বাড়ির ভাত খেতে নেই। বড় পিসিমা তাই সব রান্না পথে ঢেলে দিতে নির্দেশ দেয়। উৎসব বুঝে যায় এ যাত্রায়ও তার ভাত জুটবে না।
উৎসব সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয় কোনোভাবেই সে এই ভাত ফেলে দিতে দেবে না। তাই বাসিনির কাছ থেকে ভাত ফেলে দিয়ে আসার দায়িত্ব নেয় সে এবং এক নিঃশ্বাসে ছুটে স্টেশনে চলে যায়। তারপর অনাহারি উৎসব ভাতের ডেস্কির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে পরম তৃপ্তিতে ভাত খায়। একসময় পেটে ভাতের ভার নিয়ে উৎসব ঘুমিয়ে পড়ে।
তবে এভাবে তার ভাত খাওয়ার আশা পূরণ হবে, উৎসব তা চায়নি, ভাবেওনি। তাই কাজ করে পেট ভরে খাওয়ার পরিবর্তে পিতলের ডেচকি চুরির অপরাধে তাকে থানায় যেতে হয়, খেতে হয় বেদম প্রহার, যা সে চায় নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন