“... প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।” — ২০১৯
প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ |
খ) এই অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে বলে বক্তা মনে করেন?
ক) কে বলেছেন?
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন, ৬৮ বছরের প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
খ) এই অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে বলে বক্তা মনে করেন?
অভিনয় জীবনের ৪৫ বছর পার করেছেন প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। একদিন রাতে, ৬৮ বছর বয়সে, তিনি স্মৃতির সরণী বেয়ে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ফেলে আসা দিনগুলির গৌরব উজ্জ্বল সময়কে ছুঁয়ে দেখার তাগিদে।
গভীর রাতের নাট্যমঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ফ্ল্যাশব্যাকে দেখছেন অভিনয়ের টানে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন। দেখছেন, অভিনয়কে ভালবেসে একজন অভিনেতা কীভাবে অনায়াসে ছেড়েছিলেন জীবনের প্রথম প্রেম ও সুন্দরী নারীকে। এভাবে প্রেমকে হারানোর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়েই তিনি বুঝেছিলেন, সমাজে একজন অভিনেতাদের মূল্য ঠিক কতটা। বুঝেছিলেন, একজন অভিনেতার মূল্য সার্কাসের একজন জোকারের চেয়ে বেশি কিছু নয়।
এদিন থেকেই প্রকৃতপক্ষে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অপমৃত্যুর সূচনা হয়। ‘নাট্যাভিনয় একটা পবিত্র শিল্প’ — পবিত্রতার এই নামাবলীটা হঠাৎই ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কাছে। ফলে স্বপ্নভঙ্গ হতে শুরু করে। বেছে বেছে চরিত্রাভিনয়ের আগের অভ্যাস বদলে যায়। ‘আবোল তাবোল সব পার্ট’ করতে থাকেন। লোকের মুখে শুনলেন, জ্ঞানী ব্যক্তিরা তার সমালোচনা করছেন। তাঁর নাটক দেখে ছেলে ছোকরা নাকি গোল্লায় যাচ্ছে। আবার ওইসব জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তার অভিনয় দেখে তাঁর প্রতিভার প্রশংসা করছেন।
কিন্তু সেদিন তিনি তা বুঝতে পারেননি, পাবলিকের এই দ্বিচারিতার রহস্য কোথায়?। বুঝতে পারেননি বয়স বাড়ছে, গলার কাজ নষ্ট হচ্ছে, একটা নতুন চরিত্রকে বোঝার এবং তা ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। মানুষের ভাবনায়, কবে কবে তিনি প্রাক্তন অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন, অপমৃত্যু হয়েছে তার প্রতিভার — তিনি বুঝতে পারেননি একথাও। অভিনয় জীবনের ৪৫ বছর পর পার্শ্বচরিত্র দিলদারের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে একদিন রাতে ঘুম থেকে উঠে তিনি বুঝতে পারলেন তাঁর প্রতিভার এই অপমৃত্যুর কথা।
--------xx------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন