‘আমি দেখি’ কবিতায় প্রকৃতির প্রতি কবির অসীম ব্যাকুলতা কীভাবে বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
অথবা
“শক্তি চট্টোপাধ্যায় মূলত প্রকৃতি প্রেমের কবি” - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উক্তিটির আলোকে ‘আমি দেখি’ কবিতাটি বিশ্লেষণ করো।
শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। তাই উভয়ই উভয়কে চিনতেন ব্যক্তি জীবনে যেমন, সাহিত্যকর্মেও তেমন। ‘প্রকৃতি প্রেমের কবি’ বলাটা তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে খুবই যৌক্তিক ও স্বাভাবিক। কারণ, তিনি জানতেন, “জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন” - আজন্ম-লালিত এই বিশ্বাস নিয়ে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন জঙ্গলে, বৃক্ষের সুনিবিড় সাহচর্যে।
কবি শঙ্খ ঘোষও এ কারণেই বলেছিলেন, “সমুদ্র, পাহাড়, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন প্রকৃতি”। কিন্তু এক সময় ‘শহরের অসুখে’ জর্জরিত হয়ে কবি দীর্ঘকাল প্রকৃতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ তিনি জানতেন, প্রকৃতির সবুজ গাছের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে জীবন-সুধা। তাই, প্রকৃতি যেমন তাঁর কাব্যজগতের অবিচ্ছেদ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল, তেমনি তিনিও হয়ে উঠেছিলেন সবুজের পিয়াসী এবং একজন প্রকৃত প্রকৃতি প্রেমিক। সেকারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন :
গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার।
বস্তুত, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির যে সম্পর্ক, তা আসলে সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কের মতো। এখানে, একের থেকে অপরকে বিচ্ছিন্ন রাখা যেমন নিয়ম-বিরুদ্ধ, তেমনই হঠকারী। কিন্তু তিনি দেখেছেন, কখনও প্রয়োজনে, আবার কখনও প্রলোভনে, মানুষ শহরকে সবুজ-শূন্য করে ফেলছে। তাই দেখতে পাই, ‘আমি দেখি’ কবিতায় তিনি যাত্রাপালার বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন। লিখছেন,
চোখ তো সবুজ চায়
দেহ চায় সবুজ বাগান
গাছ আনো, বাগানে বসাও।
প্রকৃতপক্ষে, সবুজ বৃক্ষ তথা প্রকৃতির মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন মানবাত্মার সুখের চাবিকাঠি। সে কারণেই, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তাই তিনি চেয়েছিলেন, শহর জুড়ে শুরু হোক, ‘সবুজের অভিযান’। মূলত একারণেই, তিনি প্রকৃতির প্রেমে ব্যাকুল হয়ে এই কবিতার মাধ্যমে নাগরিক জীবনের কাছে আকুল আবেদন রাখছেন :
গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও
আমার দরকার শুধু গাছ দেখা
গাছ দেখে যাওয়া।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন