‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে কেন ‘ক্রন্দনরতা’ বলেছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। কবি এখানে নিজেকে কোন্ ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন?
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে কেন ক্রন্দনরতা বলেছেন? |
অথবা,
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলে উল্লেখ করা হলো কেন? কবি তাঁর কি কর্তব্য এ কবিতায় নির্দিষ্ট করেছেন?
👉 ভূমিকা :
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল সিঙ্গুরে কৃষি জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে, তার অভিঘাতে নাগরিক জীবন যে অমানবিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিল, তারই প্রেক্ষাপটে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত লিখেছেন ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি।
১) জননীকে কেন ‘ক্রন্দনরতা’ বলেছেন :
কবি লক্ষ্য করেছেন, এই সময়ে, সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে এবং সেই জমিকে এক ফসলী অথবা অনাবাদি জমি হিসেবে চিহ্নিত করে এই অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ফলে কৃষক সমাজ এই অধিগ্রহণ বিষয়ে আড়াআড়ি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। শুরু হয় ব্যপক গণআন্দোলন। এই আন্দোলন ও পাল্টা আন্দোলনে রাজনীতির মঞ্চ উত্তাল হয়ে ওঠে। এক পর্বে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে বাংলার ভূমি। লাঞ্ছিত হয় বাংলার সাধারণ মানুষ। কারও ভাই, কারও মেয়ে নিখোঁজ হয়, জঙ্গলে মেলে তাদের ছিন্ন ভিন্ন মৃতদেহ।এইসব নারকীয় হত্যা যজ্ঞের পটভূমিতে কবি অনুভব করেন বঙ্গ জননী (জন্মভূমি) যেন কিছু মানুষের দ্বারা লাঞ্ছিত ও বিপন্ন হচ্ছেন। কিছু মানুষের অমানবিক আস্ফালনে স্বদেশের মাটি মানুষের রক্তে ও কান্নায় নিদারুণভাবে ভিজে যাচ্ছে। এই রক্তাক্ত ও কান্না ভেজা নিদারুণ পরিস্থিতিকে প্রকাশ করার জন্য কবি জন্মভূমিকে ‘জননী’ বলে সম্বোধন করেছেন ও তাঁর যন্ত্রণাকাতর অসহায় অবস্থাকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২) এবিষয়ে কবির ভূমিকা বা কর্তব্য :
এই অমানবিক ঘটনা প্রবাহ ও পরিস্থিতিতে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ বলে মনে করেছেন এবং লিখেছেন :ক্রন্দনরতা জননীর পাশেএভাবে ভাইয়ের মৃত্যু, নিখোঁজ মেয়ের জঙ্গলে পাওয়া ছিন্ন ভিন্ন শরীর, কবির মধ্যে একই সঙ্গে জন্ম দিয়েছে ক্রোধ, দায়বদ্ধতা ও মানবিক মূল্যবোধের। সমাজ সচেতন ও মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাই বিধাতার বিচারের আশায় বসে থাকতে পারেননি। নিজেই নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এভাবে,
এখন যদি না থাকি
কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া
কেন তবে আঁকাআঁকি
আমি কি তাকাব আকাশের দিকে
বিধির বিচার চেয়ে?
এই পরিস্থিতিতে তিনি কলম তুলে নেন প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে। কবিতাকে ‘বিবেক’ ও ‘বারুদে’র সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বিস্ফোরণের আগে তাঁর এই কবিতা জেগে উঠেছে। একসময় এই কবিতাই ঘটাবে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ।
👉 উপসংহার :
এভাবে আলোচ্য কবিতায় কবি কাব্যিক প্রতিবাদ গড়ে তুলে মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে থাকারই অঙ্গীকার করেছেন এবং অন্যদেরও পাশে থাকতে উৎসাহিত করেছেন। এটাকেই তিনি তাঁর কর্তব্য বলে বিবেচনা করেছেন।
--------------xx------------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন