“গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও”
খ) তাঁর এমন উক্তির কারণ কী?
গ) এই উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে গাছেদের সম্পর্কে কবির মনোভাব আলোচনা করো।
ক) উক্তির বক্তা ও উদ্দেশ্য :
আলোচ্য উক্তিটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘অঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় প্রকৃতি প্রেমিক কবি নিজেই তাঁর সহ-নাগরিকদের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো বলেছেন।
খ) এমন উক্তির কারণ :
কবি জানেন, সবুজ গাছের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অনেকটা মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কের মত। তাই সবুজ গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে, মানুষের অস্তিত্ব গভীর সংকটে পড়বে। কারণ, কবির কথায় :
গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
সেই সঙ্গে কবি এও জানেন, মানুষ কখনও প্রয়োজনে, আবার কখনও প্রলোভনে পড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করে চলেছে। কবি এই প্রবণতাকে ‘শহরের অসুখ’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন :
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়
সবুজের অনটন ঘটে...
কবি জানেন, ক্রমশ সবুজহীন হয়ে পড়া নগর সভ্যতার নাভিশ্বাস ওঠা অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বৃক্ষরোপণের কোন বিকল্প নেই। মূলত এ কারণেই কবি এই নগরের রোগাক্রান্ত জনসমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে, তাঁর সহনাগরিকদের কাছে এই উক্তির মাধ্যমে খানিকটা আদেশের সুরে গাছ লাগানোর আবেদন করেছেন।
গ) গাছ সম্পর্কে কবির মনোভাব :
জলের মত, গাছেরও আরেক নাম জীবন বলা যায়। কেননা, সবুজ বৃক্ষহীন ইট-কাট-পাথরের নগর সভ্যতা মানুষের জীবনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুমূর্ষু করে তোলে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কারণেই ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় বলেছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’। প্রকৃতি প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ও অন্য একটি কবিতায় লিখেছেন,
আমি মানবো সাপটে ধরবো নতুন বাগান, নতুন গাছটি
বেঁচে উঠবো সরস ঋজু রোদ্দুরে বৃষ্টিতে।
কবি গুরুর ইচ্ছার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কবি ‘আমি দেখি’ কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন :
গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকারকিন্তু কবি বেদনাহত হয়েছেন এটা দেখে যে একশ্রেণীর অসাধু মানুষ কখনো প্রয়োজনে এবং কখনো প্রলোভনে পড়ে শহরের বুক থেকে সবুজের চিহ্ন মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কবি লোভী মানুষদের এই মনোভাবকে শহরের অসুখ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়
সবুজের অনটন ঘটে...
গাছেদের প্রতি এই ভালোবাসার মনোভাব থেকেই কবি জঙ্গলে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণেই তিনি বহুদিন আশ্রয় নিতে পারেননি অরণ্যভূমির স্নেহভরা আঁচলের তলায়। অগত্যা শহর জীবনের যান্ত্রিকতা বা কৃত্রিমাতায় ক্লান্ত কবি অরণ্যকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন শহর জীবনের আঙ্গিনা পর্যন্ত। গড়ে তুলতে চেয়েছেন শহর জুড়ে সবুজের বাগান। গাছেদের প্রতি প্রগাঢ় মমত্বের এই মনোভাব ফুটে উঠেছে ‘আমি দেখি’ কবিতার পরতে পরতে, খুবই সহজ ও সাবলীল কাব্য শৈলীর নিখুঁত প্রয়োগে।
চোখ তো সবুজ চায়!
-------------------------
গাছ আনো, বাগানে বসাও
আমি দেখি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন