“আরোগ্যের জন্য ওই সবুজ ভীষণ দরকার”
ক) কে কোথায় একথা বলেছেন?
খ) ‘ওই সবুজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? - ২০২২
অথবা,
কোন সবুজের কথা কবি বলেছেন?
গ) এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কিরূপ মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?
অথবা,
আরোগ্যের সঙ্গে সবুজের সম্পর্ক এই কবিতা অবলম্বনে বুঝিয়ে লেখো।
ঘ) ওই সবুজ তাঁর দরকার কেন?
অথবা,
কবিতাটিতে কবির আকাঙ্ক্ষা বর্ণনা করো।
ঙ) ওই সবুজকে পাওয়ার জন্য কবি কী কী নির্দেশ দিয়েছেন? - ২০১৯,২০২২
ক) কে কোথায় বলেছেন :
প্রকৃতি প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আমি দেখি’ কবিতায় উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
খ) ‘ওই সবুজ’ বলতে যা বোঝায় :
সবুজ বৃক্ষ তথা প্রকৃতির মধ্যেই কবি খুঁজে পেয়েছেন মানবাত্মার সুখ ও সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। কারণ, ‘সবুজ গাছ’ আর ‘ফসলের সবুজ’ আমাদের পরিবেশকে শুধু অনিন্দ্য সুন্দর ও দূষণমুক্ত করেই তোলে না, তারা পুষ্টি যুগিয়ে জীবনকেও করে তোলে নীরোগ ও কর্মক্ষম। ‘আমি দেখি’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘ওই সবুজ’ বলতে প্রকৃতির সেই সবুজের সমারহকে বুঝিয়েছেন, যার দূষণমুক্ত পরিবেশ, রোগমুক্ত ও কর্মক্ষম নাগরিক জীবন এবং অনিন্দ্য সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ উপহার দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
গ) বক্তার মনোভাব (আরোগ্যের সঙ্গে সবুজের সম্পর্ক) :
সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের রয়েছে নাড়ীর টান, যেমন থাকে মায়ের সঙ্গে সন্তানের। কেননা, প্রকৃতির সবুজ থেকেই মানুষ পায় বেড়ে ওঠা ও রোগ মুক্ত থাকার অধিকাংশ রসদ। তাই সবুজের প্রতি কবির তৈরি হয়েছে এক গভীর দুর্বলতা। নগর সভ্যতার অংশ হয়েও তাই তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকৃতি প্রেমিক।
প্রকৃতি প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘আমি দেখি’ কবিতায় সহজ অথচ সুন্দর রূপকল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, আরোগ্যের সঙ্গে সবুজের গভীর সম্পর্কের কথা। কবির কথায় :
গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃতি প্রেমিক কবি তাই বারবার ছুটে যেতেন প্রকৃতির কোলে। অন্য একটি কবিতায় এই ছুটে যাওয়া এবং সবুজের সঙ্গে নৈকট্যের চিত্রকল্প ফুটে ওঠে :
গাছের ভিতরে গিয়ে বসি আমি, গাছ
কথা বলে।
তবু নগর জীবনের পঙ্কিল পরিবেশে থাকতে থাকতে একসময় তিনিও ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে ওঠেন। ইচ্ছা থাকলেও যেতে পারতেন না জঙ্গল ঘেরা সবুজ প্রকৃতির কোলে। নিরুপায় হয়ে তিনি বন থেকেই তুলে আনতে চেয়েছিলেন সবুজ আপন ঘরের আঙ্গিনায়। আর এই বাসনায় তিনি সহনাগরিকদের কিছুটা নির্দেশের সুরেই আবেদন করেন সবুজ বাগান তৈরিতে।
গাছ আনো, বাগানে বসাও।
আমি দেখি।।
প্রকৃতপক্ষে সবুজ প্রকৃতির প্রতি অদম্য ভালোবাসা এবং আরগ্যের সঙ্গে সবুজের সম্পর্কের গভীরতা কবিকে উদ্ধৃত উক্তিটি করতে উৎসাহিত করে।
ঘ) কবির সবুজ দরকার কেন? (কবিতায় কবির আকাঙ্ক্ষা) :
এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য “আমার দরকার শুধু গাছ দেখা” এই প্রশ্নের (খ) দাগের ‘গাছ দেখতে চাওয়ার কারণ’ উত্তরটি দেখো।
সরাসরি উত্তরের পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করো।
ঙ) সবুজ পাওয়ার উপায় (কবির নির্দেশ) :
মানুষের সঙ্গে অরণ্যের যে সুগভীর সম্পর্ক তা কবি জানেন। কবি জানেন, নগর সভ্যতার প্রাণহীনতা, নিরসতা ও ক্লেদ-ক্লান্তিতে ভরা পরিবেশ থেকে মুক্তির একটাই উপায় আছে। আর তা হল বৃক্ষরোপণ। কবি তাই কবিতার শুরুতেই নির্দেশ দিয়েছেন :
গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও
এরপর তিনি উল্লেখ করেছেন যান্ত্রিক সভ্যতার নামে কীভাবে নির্বিচারে বন কেটে বসতি গড়ে তুলছে এবং তার ফলে মানব সভ্যতা কীভাবে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছে। তাই কবি যেন সমস্যা বোঝার নির্দেশ দিচ্ছেন। বলছেন :
গাছের সবটুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
আসলে এই বার্তার মাধ্যমে তিনি নির্বিচারে বৃক্ষনিধন না করার পরোক্ষ নির্দেশ করছেন।
এরপর তিনি সহ-নাগরিকদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। বলছেন :
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়
সবুজের অনটন ঘটে...
এবং সবশেষে তিনি পুনরায় নির্দেশ করছেন বৃক্ষরোপনের জন্য। কবির কথায় :
তাই বলি, গাছ তুলে আনো
বাগানে বসাও আমি দেখি
বস্তুত প্রকৃতি প্রেমিক কবি সবুজের প্রতি গভীর ভালোবাসায় এবং আরোগ্যের আশায় সহনাগরিকদের বৃক্ষ রোপণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন