“চোখ তো সবুজ চায় / দেহ চায় সবুজ বাগান”
ক) কার চোখ ‘সবুজ’ চায়?
খ) চোখ কেন সবুজ চায়?
গ) চোখ ও দেহের সঙ্গে সবুজ বাগানের সম্পর্ক কী?
ঘ) কবির এই মন্তব্যটির যথার্থতা (সার্থকতা) কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
ঙ) এই মন্তব্যের আলোকে গাছের প্রতি কবির মমত্ববোধ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
ক) কার চোখ ‘সবুজ’ চায়?
প্রকৃতি প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবির নিজের চোখ সবুজের আকাঙ্ক্ষী।
খ) চোখ কেন সবুজ চায়?
পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয় হল চোখ। এই চোখকে মনের আয়না বলে অভিহিত করা হয়। কারণ, চোখের সঙ্গে মানুষের মনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। চোখের তৃপ্তি মনের তৃপ্তিকে ত্বরান্বিত করে। আমাদের চোখের সঙ্গে সবুজ রঙের রয়েছে প্রগাঢ় প্রীতির সম্পর্ক। বিশেষ করে সবুজ গাছের সজীব পাতায় মোড়া বাহারী বাগান মানুষের মনকে উজ্জীবিত করে তোলে।
প্রকৃতি প্রেমিক কবির শহরের অসুখে আক্রান্ত ও বিধ্বস্ত নাগরিক মনকে উজ্জীবিত করার জন্য চোখ সবুজ চায়।
গ) চোখ ও দেহের সঙ্গে সবুজ বাগানের সম্পর্ক কী?
সবুজ গাছ বা বাগানের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সবুজ বাগান মানুষের শরীর ও মনকে যথাক্রমে পুষ্ট ও উজ্জীবিত করে। সবুজের স্নিগ্ধতার ছোঁয়া মনের নির্মলতা ও কোমলতার পরশ এনে দেয়। মনের নির্মলতা ও কোমলতার সংবেদন চোখ মারফত আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছায়। আর তার ফলেই মনের প্রশান্তি লাভ সম্ভব হয়ে ওঠে। সুতরাং চোখের সঙ্গে সবুজ বাগানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
অন্যদিকে, নাগরিক জীবনের ক্লান্তিতে কবির মন বেদনা বিধুর। কবি জানেন, নাগরিক জীবনের এই ক্লান্তি থেকে এবং শহরের প্রাণহীনতা, মৃত্যুর পান্ডুরতা থেকে একমাত্র সবুজই মানুষকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। কারণ এই সবুজ পুষ্টি যুগিয়ে এবং শহরের দূষণকে শোষণ করে মানুষের দেহকে রোগমুক্ত ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর করে তোলে। আর এ কারণেই সবুজ বাগানের সঙ্গে মানবদেহ প্রগাঢ ভালোবাসার সম্পর্ক অনুভব করে। বাস্তবিক পক্ষে উভয়ের মধ্যে রয়েছে পরস্পরকে পুষ্ট করার প্রাকৃতিক ক্ষমতা।
ঘ) কবির এই মন্তব্যটির যথার্থতা বা সার্থকতা :
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় একদিকে প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ অন্যদিকে পরিবেশ সচেতন নাগরিক। তিনি জানেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তা অলংঘনীয় এবং মধুর। কারণ উদ্ভিদ ও মানুষ পরস্পরের পরিপূরক এবং সহায়ক। আর এই উপলব্ধি থেকেই তিনি জঙ্গল থেকে গাছ এনে শহর জুড়ে বাগান গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সহনাগরিকদের।
প্রকৃতপক্ষে, পরিবেশ সচেতন কবি লক্ষ্য করেছেন সভ্যতার অগ্রগতির নাম করে কিছু মানুষ নির্বিচারে সবুজ ধ্বংস করে নগরায়ন করে চলেছেন। এতে প্রকৃতি প্রতিনিয়ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, আর হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়’। তিনি এই উপলব্ধি করেছেন ‘শহরের অসুখে’ আক্রান্ত এই নাগরিক জীবনকে রোগমুক্ত ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে সবুজের উদ্যান। তবেই পাওয়া যাবে নাগরিক কোলাহল মুক্ত প্রকৃতির সেই নিরাপদ আশ্রয় যা মানুষের চোখ দেহ মনকে আনন্দময় করে তুলবে।
চোখ তো সবুজ চায়!
দেহ চায় সবুজ বাগান
ঙ) এই মন্তব্যের আলোকে গাছের প্রতি কবির মমত্ববোধ :
জলের মত, গাছেরও আরেক নাম জীবন বলা যায়। কেননা, সবুজ বৃক্ষহীন ইট-কাট-পাথরের নগর সভ্যতা মানুষের জীবনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুমূর্ষু করে তোলে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কারণেই ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় বলেছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’। কবি গুরুর ইচ্ছার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কবি ‘আমি দেখি’ কবিতায়ও উল্লেখ করেছেন :
গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকারকিন্তু কবি বেদনাহত চিত্তে লক্ষ্য করেছেন যে, একশ্রেণীর অসাধু মানুষ কখনো প্রয়োজনে আবার কখনো প্রলোভনে পড়ে শহরের বুক থেকে সবুজের চিহ্ন মুছে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কবি এই সমস্ত লোভী মানুষদের এই মনোভাবকে ‘শহরের অসুখ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়
সবুজের অনটন ঘটে...
গাছেদের প্রতি এই ভালোবাসার মনোভাব থেকেই কবি জঙ্গলে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণেই তিনি বহুদিন আশ্রয় নিতে পারেননি অরণ্যভূমির স্নেহভরা আঁচলের তলায়। অগত্যা শহর জীবনের যান্ত্রিকতা বা কৃত্রিমাতায় ক্লান্ত কবি অরণ্যকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন শহর জীবনের আঙ্গিনা পর্যন্ত। গড়ে তুলতে চেয়েছেন শহর জুড়ে সবুজের বাগান। গাছেদের প্রতি এই প্রগাঢ় মমত্বের মনোভাব ফুটে উঠেছে ‘আমি দেখি’ কবিতার পরতে পরতে, খুবই সহজ ও সাবলীল কাব্য শৈলীর নিখুঁত প্রয়োগে।
চোখ তো সবুজ চায়!
-------------------------
গাছ আনো, বাগানে বসাও
আমি দেখি।
--------------xx------------
📢 এই কবিতার আরও প্রশ্ন ও উত্তর এখানে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন