“সবুজের অনটন ঘটে”
ক) ‘সবুজের অনটন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
খ) কোথায় ‘সবুজের অনটন’ ঘটে?
গ) সবুজের অনটনের কারণ কী?
ঘ) সবুজের অনটন কাটাতে কী করা প্রয়োজন বলে কবি মনে করেছেন?
ক) সবুজের অনটন :
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি দেখিয়েছেন, দ্রুত নগরায়ন এবং যন্ত্র-সভ্যতার প্রসারের কারণে শহর কীভাবে বৃক্ষ শূণ্য হয়ে পড়েছে। সভ্যতার অগ্রগতির নাম করে এভাবে শহরকে বৃক্ষশশূন্য করে ফেলার মানসিকতাকে কবি ‘শহরের অসুখ’ বলে উল্লেখ করেছেন। আর এই অসুখের দাপটে পাল্লা দিয়ে কমেছে শহরের সবুজ গাছ। এভাবে শহর জুড়ে সবুজের দ্রুত কমে যাওয়াকে কবি এই কবিতায় ‘সবুজের অনটন’ বলে অভিহিত করেছেন।
খ) কোথায় ‘সবুজের অনটন’ ঘটে?
মানব সভ্যতার অগ্রগতির হাত ধরে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠতে থাকে নগর সভ্যতা। এইভাবে নগরায়ন এবং যন্ত্র সভ্যতার দূষণের কারণে শহরের সবুজ এক সময় গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ মানুষ গাছ কেটে আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে গিয়ে শহর বা নগরে ‘সবুজের অনটন’ ডেকে আনে।
গ) সবুজের অনটনের কারণ কী?
মানব সভ্যতার অগ্রগতির হাত ধরে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠতে থাকে নগর সভ্যতা। হরপ্পা সভ্যতার হাত ধরে শুরু হয় ভারতীয় উপমহাদেশে এই ধরনের নগরায়ন।
১) এইভাবে নগরায়নের কারণে একদিকে যেমন ইট পোড়ানো, অন্যদিকে তেমনি বাড়িঘর তৈরি করার জন্য নির্বিচারে গাছ কাটার হিড়িক পড়ে যায়।
২) আবার অষ্টাদশ শতকের ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের সূত্র ধরে যন্ত্রস্বভ্যতার বিকাশ শুরু হয়। এই যন্ত্র সভ্যতা ও তার দূষণেও শহরের সবুজ গভীর অসুখের কবলে পড়ে।
৩) অন্যদিকে ধনতান্ত্রিক অর্থ-ব্যবস্থার যাঁতাকলে পড়ে মানুষ সার্বিক স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করে। ফলে জন্ম হয় এক শ্রেণির লোভী ও স্বার্থপর মানুষ। এরা প্রাকৃতিক নিয়মের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে গাছ কেটে শহরকে নগরে রূপান্তরের চেষ্টা করে।
এভাবে মানুষ গাছ কেটে আধুনিক যন্ত্র সভ্যতার বিকাশ ঘটাতে গিয়ে শহর বা নগর জীবনে ‘সবুজের অনটন’ (আকাল) ডেকে আনে।
ঘ) সবুজের অনটন কাটানোর উপায় :
প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশ সচেতন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘আমি দেখি’ কবিতায় তুলে ধরেছেন ‘সবুজের অনটন’ দূর করার একটি নির্ভরযোগ্য উপায়। কবিতার প্রথম লাইনেই আমরা তার হদিস পাই। তিনি লিখেছেন :
গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও
সবুজটুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার
আসলে কবি জানতেন, উদ্ভিদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বৃক্ষের সাহচর্যে ও সহাবস্থানে মানুষ পায় বিশুদ্ধ নিঃশ্বাসের নিশ্চয়তা। চোখ জোড়ানো সবুজের বাগান মানুষের শরীর ও মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। জীবনের শান্তি, তৃপ্তি ও স্নিগ্ধতা ফিরিয়ে আনতে তাই সবুজ গাছের জুড়ি নেই।। কবিকে তাই বলতে শুনি :
চোখ তো সবুজ চায়
দেহ চায় সবুজ বাগান
সুতরাং কবির ভাবনায় সবুজের অনটন কাটানো এবং শরীর ও মনকে রোগমুক্ত রাখার একমাত্র উপায় হল শহরজুড়ে গাছ লাগানো। আর একারণেই কবিকে কবিতার প্রথম লাইনের মতো শেষ লাইনেও বলতে শুনি :
গাছ আনো ,বাগানে বসাও
আমি দেখি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন